মোনালিসার মোহমায়া
সৈয়দ মুন্তাছির রিমন : তোমি ? তুমি কি সেই ছবি ? যা শুধু পটে আকাঁ এক নারী ! সংসারের বাহিরে সবাই এক রকম দেখবার প্রত্যাশা করে। ছবির মত সুন্দর স্থির, অচ ল, ছবির মত কাঁদেনা, হাসেও না ও অনুভূতিহীন। ছবির মত সংসারে চৌকানো ফ্রেমে বাধা। ছবির মত নারীর পটে বিবি হয়ে সেজে গুজে বসে থাকা। শুধুই সংসারের সৌন্দর্য্য বন্ধন করবে। কিন্তু সেই নারীর মধ্যে সুখ দু:খের অনুভূতি গুলো প্রবল। সংসারের চৌকানো ফ্রেমের বাইরে বেরুবার জন্য আপ্রাণ যার প্রচেষ্ঠা। যে নারী কারও প্রচন্দের নয়। না সমাজের না সংসারের।
নারীকে হতে হবে মোনালিসার মত রহস্যময়ী এক ছবি। যে সব দিকই সামলাবে। মানে মোনালিসার ছবিকে যেমন মানুষ নিজের প্রচন্দমত ব্যাখ্যা করে। যেমন কেই ভাবে মোনালিসার মুচকি দুষ্টমী হাসি হাসছে, কেউ ভাবে আসলে মোনালিসা কান্না চেপে হাসছে। আবার ডেন্টিস্টরা ভাবেন মোনালিসার দাঁত গুলো আঁকা বাকা ছিল বলেই মোনালিসার হাসিটা এরকম। এর মধ্যে রহস্য ফহস্য কিছু নেই। সব ধারনার সঙ্গেই নিরব মোনালিসা নিজেকে মানিয়ে নেয়, প্রতিবাদ করে না, ক্ষুব্ধ হয়না। সমাজও চায় প্রতিটি নারী হউক মোনালিসার ছবির মত রহস্যময় নীরব এক নারী। যে সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেয় নিজেকে। তার সম্পর্কে সব ব্যাখ্যাতেই সে সন্তুষ্ট থাকে। নারীকে কখনও পটে আঁকা ছবির ভূমিকায় নিরবে অভিনয় করে যেতে হয়। তাই কয়েকটি খুব পরিচিত নমুনা তুলে ধরলাম।
নারী বাড়ীর লক্ষী। তাই তার রাগ থাকতেই নেই। বাড়ীর কর্তা, কর্তার মা বাবা সহ বয়োজ্যৈষ্ঠ আত্মী পরিজনের কটু কথা, রাগ বক্রোক্তিতেও তাকে স্থিরহাতে সংসার নামক নৌকার হাল ধরে রাখতে হবে এবং বিন্দু মাত্র বিচলিত হলে চলবে না।
নারী সাংসারিক কর্তব্য পালনে সামান্য অবহেলা হলে স্বামী তাকে ভুল দরিয়ে দিতে পারেন, রাগ করতে পারেন, ক্ষুদ্র হতে পারেন। কিন্তু একই কারণে স্ত্রী রাগ করতে বা ক্ষব্ধ হতে পারবে না। ক্ষুব্ধ হওয়া তার একতিয়ারের মধ্য পড়ে না। তিনি মানুষ নন। অতি মানবী। অত এব রাগ বা মেজাজ থাকতেই নেই। নারী তুমি চুপ থাক পুনঃবার মোনালিসা হয়ে যাও।
নারীকে এমন হতে হবে যেনো শ্বশুড় কুলের আত্মীয়রা যারা যেমন পছন্দ করে। সে তাকে ঠিক তেমনি ভাবে দেখতে পারে। ঐ মোনালিসার হাসির মত। হাসিটিকে যার যার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করে সবার সন্তুষ্ট থাকে। তেমনি নারী মোনালিসার মত বহুরূপী হতে হবে। যদি শ্বশুড়ালয়ের কারো আদুনিকা প্রচন্ড হয় তাহলে সে যেন মনে করতে পারে তুমি সত্যি আধুনিকা। আবার কারো শান্ত বউ পছন্দ হলে সে যেন তোমার মাঝে শান্ত রূপটাই আবিষ্কার করতে পারে। নারী আবার তুমি মোনালিসার মত হয়ে যাও। নিজেদের মত করে একটু মুচকি হাসো। যে যার পছন্দ মত এই হাসির ব্যাখ্যা করে নিবে।
নারীর মনে প্রতিহিংসা থাকতে পারে না। ধরুন একটি ছেলে তার পছন্দমত একটি মেয়েকে বিয়ে করে আনল। ছেলের বাড়ীর আত্মীয়রা সেই ছেলের সালাম গ্রহণ করল। অথচ ছেলের বউকে দেখলেই মুখ ঘুরিয়ে নিল। কিন্তু দুজনই একই অপরাধে অপরাধী। অথচ দোষী হবে নারী তাকে শত অপমান হজন করে ক্ষমাশীল হতে হবে। আর এত কিছুর পরও নিজের পরিবারে তাকে সুখী সুখী অভিনয় করে যেতে হবে। যেমন করে গেছে লিওনার্দো দ্যা ভিনজির মোনালিসা। কে জানে কত না বলা কষ্ট, কত দুঃখকে গোপন রেখেই রহস্যময় হাসি হাসতে হয়েছে তাকে। তাই তুমি আজ মোনালিসাকে অনুকরন বা অনুসরন কর। যারা বিশ্বের মানব মোনালিসার মতো তোমার মোহমায়ার রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত সময় কাটায়।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট। প্যারিস-ফ্রান্স।