মির্জাপুরে গলা কাটা দুই শিশুর হত্যা মামলার ৩ আসামীর মৃত্যুদন্ড
মোঃ রুবেল মিয়া ,মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় গত ২০১৬ সালে ২৭ জানুয়ারি ভাওড়া ইউনিয়নে হাড়িয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ত্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে শাকিল ও ইমরান নামের দুইজন শিশু নিখোঁজ হয়েছিল। নিখোঁজ হওয়া সেই শাকিল (১১) ও ইমরান (১১) নামের দুই শিশুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবী করে অপহরণ কারীরা। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে হত্যার ঘটনায় তিন আসামীর মৃত্যুদন্ড আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২ টার দিকে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাউদ হাসান এ রায় দেন। এ ঘটনার আরও ৬ আসামীর মধ্যে ৩ জনের আমৃত্যু কারাদন্ড ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেক আসামীকে এক লাখ করে টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।এই রায় দেয়ার সময় আট আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, মির্জাপুর উপজেলার নিলজা গ্রামের বাছেদ মিয়ার ছেলে রনি মিয়া (২৫) ও ধামরাই উপজেলার চর-চৌহাট গ্রামের মো. তারা মিয়ার ছেলে মিল্টন (২২), সামছুল হকের ছেলে বাহাদুর মিয়া (২২)।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন,মির্জাপুর উপজেলার আমরাইল তেলিপাড়া গ্রামের জব্বার মল্লিকের ছেলে জাকির হোসেন,ধামরাই উপজেলার চর-চৌহাট গ্রামের তাজেল মিয়ার ছেলে আরিফ ও আফসার উদ্দিনের ছেলে শামীম মিয়া। এদের মধ্যে আরিফ নামের এক আসামী পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছেন,রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত (পিপি) রফিকুল ইসলাম খান আলো।
আমৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, মির্জাপুর উপজেলার আমরাইল তেলিপাড়া গ্রামের শাহাদত হোসেনের ছেলে আবদুল মালেক, পাশ্ববর্তী ধামরাই উপজেলার চৌহাট গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে শাহিনুর এলাইজ শাহা,শশ্বধরপট্টি গ্রামের মমরেজ আলীর ছেলে জহিরুল ইসলাম।
এজাহার সুত্রে জানা যায়, গত ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি ধামরাই উপজেলার চর-চৌহাট গ্রামের প্রবাসী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিল (১১) ও একই গ্রামের প্রবাসী আববকর আলীর ছেলে ইমরান (১১) বাড়ি থেকে পাশ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার হাড়িয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ত্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে তারা দুইজন নিখোঁজ হয়। একদিন পর মোবাইল ফোনে দুই শিশুর পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে ফোন বন্ধ করে রাখে অপহরণকারীরা। ঘটনার ২ দিন পর মির্জাপুর উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের একটি লেবু বাগান থেকে নিখোঁজ ২ শিশুর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরে ওই মাসের ৩০ জানুয়ারি শিশু শাকিলের মা জোৎসনা বেগম বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত স্বাপেক্ষে ১১ জন আসামীর নাম উল্লেখ করে ঘটনার ০৪ মাস পর ০৮ জুন আদালতে চার্জশীট জমা দেয় পুলিশ। এতে মির্জাপুর উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের ময়নাল হকের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৩৮) ও ধামরাই থানার চর-চৌহাট গ্রামের রমজান আলীর ছেলে শহীদুল ইসলামের (৩০) বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।পরে পুলিশ আট আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়। তবে আরিফ নামের এক আসামী পলাতক রয়েছে।
রায়ের ব্যাপারে নিহত শিশু শাকিলের মা (বাদী) জোৎসনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, সন্তান হত্যার বিচারের জন্য টানা ৫ বছর মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আসামীদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ে আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা ন্যায় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে যাবো, ন্যায় বিচার পাবেন এমনটিই আশা করছেন আসামীপক্ষরা।