নাটোরে নিখোঁজের ১২ বছর পর মা’য়ের বুকে ফিরলো রিফাত
লিয়াকত হোসেন হোসেন রাজশাহী ব্যুরোঃ ছোট বেলা থেকেই ট্রেন দেখার শখ ছিল ওর। বুকের ভেতরে লালিত সেই শখ পূরণে বাড়ি থেকে কাউকে না জানিয়ে বের হয় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মোহাম্মদ রিফাত।বাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে চড়ে সে হারিয়ে যায়।
নিখোঁজ হওয়ার ১২ বছর পর সোমবার রাতে বাবা-মায়ের কোলে ফিরে এসেছে রিফাত। এফএম রেডিওর আর জে কিবরিয়ার জীবন গল্পের মাধ্যমে সে খুঁজে পেয়েছে তার পরিবারকে। ঘটনাটি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার গালিমপুর গ্রামের।
রিফাত ও তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে শখের বসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্রেন দেখতে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মালঞ্চি স্টেশনে যায় শিশু রিফাত। ওই সময় সে উপজেলার গালিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা অজানা একটি ট্রেনের উঠে ট্রেনের ভেতর ঘুরে ঘুরে দেখার সময় ট্রেন ছেড়ে দিলে সে হারিয়ে যায়।
হারিয়ে যাওয়ার পর প্রথম ৭ বছর রাজশাহীর কয়েকটি বাড়িতে রাখালের কাজ করেই তার সময় কাটে। লেখাপড়া শেখার অনেক ইচ্ছা প্রকাশ করলেও কেউ তাকে সে সুযোগ দেয়নি। এক সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৌঁছে যায় রিফাত। পরে এক প্রবাসীর একটি মোবাইল চুরির মিথ্যা অভিযোগে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী কারাগারে। সেখান থেকে তার ঠাঁই হয় রাজশাহী বায়া কিশোর সংশোধনাগারের এতিমখানায়।
প্রায় ৫ বছর এতিমখানায় অবস্থানের পর বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়ার আশায় সেখানকার এক বড়ভাইয়ের মাধ্যমে ঢাকায় গিয়ে অংশ নেয় আর জে কিবরিয়ার জীবনগল্পের অনুষ্ঠানে। গত ২৮ডিসেম্বর ভিডিওটি প্রচার হলে দুদিনের মধ্যেই পরিবারের খোঁজ পায় রিফাত।
এক সপ্তাহের মধ্যেই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাবা-মায়ের কোলে ফিরে এসেছে সে। দুই মেয়ে আর এক ছেলের সংসারে বড় সন্তান একমাত্র ছেলেকে ১২ বছর পর ফিরে পেয়ে গালিম-পুরের জাহাঙ্গীর হোসেন ও রুপালী বেগমের ঘরে এখন বইছে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস।
হারিয়ে যাওয়া রিফাতকে দেখতে মঙ্গলবার সকালে জাহাঙ্গীরের বাড়িতে এলাকাবাসীদের ভিড় জমে।
১২ বছর পর ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত সহপাঠী গালিমপুর গ্রামের সজল আলী জানান, রিফাতের সঙ্গে একই ক্লাসে তিনি পড়তেন। সে সময় তিনি নিজেও ছোট ছিলেন। বন্ধুকে হারিয়ে তিনি ব্যথিত ছিলেন। সেই সহপাঠীকে ফিরে পেয়ে বেশ খুশি হয়েছেন তিনি।
মা রুপালী বেগম বলেন, হারিয়ে যাওয়া বুকের মানিককে খুঁজে পেয়ে সৃষ্টিকর্তার দরবারে শুকরিয়া জানাই। তিনি বলেন, আর কারো সন্তান যেন হারিয়ে না যায়।
রিফাতের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভিডিওতে তার ছেলের খবর দেখার পর স্থানীয়রা তাকে খবর দেয়। এরপর রিফাতের বর্তমান ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে আইনি সব প্রক্রিয়া শেষে রিফাতকে বাড়িতে ফিরে এনেছেন। তবে প্রতি মাসে নাটোর সমাজসেবা অফিসে কর্মকর্তার নিকট রিফাতকে হাজির করতে হবে বলে তিনি জানান।