স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিজয়ের পরিপূর্ণতা অর্জন করে-তোফায়েল আহমেদ
ভোলা প্রতিনিধি : আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাংসদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১০ জানুয়ারী চির স্মরণীয় ও অন্যন্য ঐতিহাসিক একটি দিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিজয়ের পরিপূর্ণতা অর্জন করে। ১৬ ডিসেম্বর আমরা হানাদারমুক্ত হই। কিন্তু আমরা স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারি নাই। যেদিন বঙ্গবন্ধুর ফিরে এলেন সেদিন অর্থাৎ ১০ জানুয়ারী আমদের স্বাধীনতার পূর্ণতা লাভ করেছিল।
আজ রবিবার ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে ভোলার সরকারি স্কুল মাঠের বিশাল এক সমাবেশে ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু হৃদয় দিয়ে উপলদ্ধি করেছিলেন পাকিস্তান বাঙ্গালীদের জন্য হয় নাই। একদিন বাঙ্গালার ভাগ্য নিয়ন্ত্রক বাঙ্গালীদেরকেই হতে হবে। সে লক্ষ সামনে নিয়ে জাতির পিতা প্রথমে ছাত্রলীগ তারপর আওয়ামী লীগ তারপর মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার বিজ রোপন করে ধীরে ধীরে ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যূত্থান, ৭০’র নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সমস্ত বাঙ্গালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি প্রথমে নিজেকে তারপর তার দল আওয়ামী লীগকে তারপর বাংলার মানুষকে এক কাতারে এনে তাদেরকে তৈরী করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে আগারতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে একটি মামলা দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো। এক পাশে ফাঁসির মঞ্চ আরেক পাশে ছিলো প্রধানমন্ত্রীর গদি। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর গদি ত্যাগ করে ফাঁসির মঞ্চ বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে ১১ দফা কর্মসূচি রচনা করে ১৭ জানুয়ারী যে আন্দোলন সূত্র করেছিলাম তাতে ২০ জানুয়ারী আসাদ শহীদ হলো। ২৪ জানুয়ারী মতিউর, মকবুল, রুস্তম ও আলমগীরের রক্তের মধ্য দিয়ে ৬৯-এ গণঅভ্যূত্থান হলো। সেই গণঅভ্যূত্থানে আইয়ুব খানের পতন হলো। তৎকালিন শাসকগোষ্ঠী কারফিউ জারি করে আমাদের এ আন্দোলনকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু আমরা কারফিউ ভঙ্গ করে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলাম। তার পর বাধ্য হয়ে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়া হয়। তার আগে ৯ ফেব্রুয়ারী আমার জীবনের প্রথম জনসভায় আমি শ্লোগান তুলেছিলাম, শপথ নিলাম শপথ নিলাম মাগো তোমায় মুক্ত করবো, শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করবো। ২২ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পর ২৩ ফেব্রুয়ারী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের আগে আমি আমার বক্তব্যে বলে ছিলাম “প্রিয় নেতা কারাগারের অন্ধকার প্রকষ্ঠে বসে তুমি বাংলার মানুষের ছবি তুমি হৃদয় দিয়ে অঙ্কন করেছো। প্রিয় নেতা ফাঁসির মঞ্চে দাড়িয়ে তুমি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছো। তোমার কাছে বাঙ্গালী জাতি ঋণী। এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না।
বঙ্গবন্ধুর এ রাজনৈতিক সচিব আরো বলেন, দীর্ঘ নয় মুক্তিযুদ্ধের পর ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল এক অবিস্মরণীয় ক্ষণ, অভূতপূর্ব মুহূর্ত। মুক্ত দেশের উচ্ছ্বাস নাগরিকদের দেখে সেদিন বঙ্গবন্ধুর চোখে বিজয়ী বীরের পরিতৃপ্তির হাসি ছিল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ২৮ দিনের মাথায় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ভোরে লন্ডনে পৌঁছান। পরে ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি রাজকীয় বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দিল্লিতে সামান্য যাত্রা বিরতি করে ১০ জানুয়ারি দুপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনা বর্ণনা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, কেমন আছেন আমরা জানতাম না। ৮ জানুয়ারি আমরা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির খবর পাই।
সময় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ আবেগআপ্লুত হয়ে কান্নায় জড়িত কন্ঠে আমৃত্যু ভোলার মানুষের পাশে থাকর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। একই সাথে ভোলার সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোলার উন্নয়নে কাজ করার আহবানও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিষ্টার ও সততার সাথে দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। আজকে অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। যমুনা সেতু তিনি তৈরি করেছেন, পদ্মা সেতু আগামী বছর চালু হবে। তিনি ভোলা-বরিশাল ব্রিজের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, আমরা অচিরেই সেই ভোলা-বরিশাল ব্রিজ দেখতে পাব। করোনা মহামারী চলাকালে প্রধানমন্ত্রী যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহন করছেন এটা ঐতিহাসিক, পৃথীবিতে বিরল। আজকে প্রধান মন্ত্রীর প্রচেষ্টায় আমাদের ভোলায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। নদী ভাঙা থেকে শুরু করে ভোলায় রাস্তা ঘাট পুল কালভাট সব হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দোস্ত মাহমুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হামিদুল হক বাহালুল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মমিন টুলু, যুগ্ম সম্পাদক জহুরুল ইসলাম নকিব, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম গোলদার, পৌর মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব, সদর পৌর আওয়ামীগের নির্বাহী সদস্য আনোয়ার পাশা শামীম , আওয়ামী প্রজন্ম লীগের সম্পাদক আনোয়ার পাশা বিপ্লবসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এসময় সমাবেশ স্থলে সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে প্রায় অর্ধলক্ষাধীক দলীয় নেতাকর্মী ব্যানার ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়। মুহুর্তের মধ্যে সরকারি স্কুলের বিশাল মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আলোচনা সভা শেষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে। বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বাদ্য বাজিয়ে মিছিল নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।