রাঙ্গুনিয়ার বৌদ্ধ ভিক্ষু শরনংকর থের”
হাকিকুল ইসলাম খোকন ,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র সংবাদদাতা :চট্রগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়ার বৌদ্ধ ভিক্ষু শরনংকর থেরকে নিয়ে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সমাজ একটি অস্বস্তিকর সময় অতিক্রম করে আসছে গত বছরের ২০২০-এর জুলাই মাস থেকে। বৌদ্ধ ভিক্ষুর বিহারের জায়গা নিয়ে পক্ষে এবং বিপক্ষে বাংলাদেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, সভা-সমাবেশ হয়ে আসছে দীর্ঘ ৬-৭ মাস ধরে। সমস্যাটি সমাধানের জন্য প্রথম দিকে বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ তৎপর ছিলেন।
রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ এবং বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদের সাথে ঢাকায় তাঁর বাসভবনে বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দকে একটি বৈঠক করেছে,যাতে আশ্বস্ত ছিল নেতৃবৃনদ,তারা ভেবেছিল সমস্যা সমাধান হবে।দুঃখের বিষয় সমস্যার সমাধান হয়েও যেন হলোনা শেষ।
পরবর্তীতে সমস্যাটি ভিন্ন রূপ ধারণ করলো। রাঙ্গুনিয়াতে ইসলামী উম্মা ঐক্য পরিষদ গঠিত হলো এবং পরিস্থিতি এমন হলো যে, মনে হলো বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং মুসলিম সম্প্রদায় পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে একটা সাম্প্রদায়িক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দু’পক্ষের লোকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য বেশ কিছু লোক মিডিয়ায় বাক-যুদ্ধে অবতীর্ন হলেন। বিভিন্ন মাধ্যমে পক্ষ-প্রতিপক্ষের যুক্তি-তর্ক থেকে শুরু করে গালি গালাজ বিনিময় পর্যন্ত কিছুই বাকি রইলো না। অতঃপর উভয় পক্ষ কিছু দিনের বিরতি নিলেন সব কিছুর।
সমস্যাটিকে একান্ত একটি পারিবারিক সমস্যার মতো। কোন পরিবারে অভিভাবক না থাকলে কিংবা পরিবারের সদস্যরা
অভিভাবককে না মানলে যে সমস্যা দেখা দেয়, রাঙ্গুনিয়ার ফলাহারিয়া গ্রামের শরনংকর থের এবং তাঁর বিহার নিয়ে সৃষ্ট সমস্যাটি
ঠিক অনুরূপ একটি পরিস্থিতির শিকার।
সমস্যাটিকে কোন অবস্থাতেই ভিন্ন রূপ দেয়া কিংবা ভিন্ন রূপে দেখা কোন পক্ষেরই উচিত হবে না। রাংগুনিয়ার সমস্যাটিকে কোন ধরনের রাজনৈতিক রূপ না দিয়ে তা বৌদ্ধ এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে এবং কোন ধরনের মিথ্যা বা দুরভিসন্ধি না রেখেই সমাধান করতে হবে। মুসলিম উম্মা ঐক্য পরিষদের লোকজন এবং শরনংকর ভিক্ষুর পক্ষের বৌদ্ধ জনগণ পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়ার কোন যৌক্তিক কারন নেই। সমস্যাটি সমাধানের জন্য দরকার পর্যাপ্ত আন্তরিকতা। নেতৃবৃনদ চাই না ভিন্ন মতাদর্শী বা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি করুক।
রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ এবং তথ্য মন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ এই সমস্যা সমাধানের জন্য একাই যথেষ্ঠ। কেননা, তিনি অত্যন্ত সদজন,উচ্চ শিক্ষিত, সমাজ ও পরিবেশ সচেতন ব্যক্তি।
তিনি সম্পূর্ণ নিজ যোগ্যতায় সফল ছাত্র রাজনীতি থেকে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থান গড়ে তুলেছেন। শুধু তাই নয়, ১/১১তে বাংলাদেশে যখন বেসামরিক খোলস পরে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশকে রাজনীতিবিদ শূন্য করার একটা পাঁয়তারা চলছিল সেই সময় ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা ড.হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং আস্থা ভাজন দলীয় কর্মী হিসাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ২০০৮ইং সনে বাংলাদেশে বিশেষ কারাগারে বন্দি জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য প্রবাসে সর্বশেষ
আন্দোলন হিসাবে সুহাস বডুয়া কয়েক জন সহকর্মীদের সংগে নিয়ে বোষ্টন সিটি হলের সামনে ১লা জুন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত “অনশন কর্মসূচি” পালন করেন ।সেদিন বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী জ.আব্দুল মোমেন এমপি সে অনশন কর্মসূচিতে সমর্থন জানানোর জন্য সেখানে উপস্থিত হন। এর পরের সপ্তাহে, ১১ই জুন জননেত্রী শেখ হাসিনা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বোষ্টন শহরে আসেন। আমরা বোষ্টন বিমান বন্দরে তাঁকে স্বাগত জানালাম। ড.হাছান মাহমুদ সে সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে নেত্রীর সাথে বোষ্টন তথা যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। আমরা তাঁকে নিয়ে কয়েকটি মিটিং করি এবং দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে
ভালোভাবে জানতে পারি।
তিনি মনে করেন,আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ যাঁরা আলোচনা শুরু করেছিলেন, বিশেষ
করে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং অন্যান্য যাঁরা প্রথম বৈঠকে উপস্থিত
ছিলেন, আপনাদের বিনীত অনুরোধ জানাবো আবারও আলোচনা শুরু করতে। কেননা, ফলাহারিয়া জ্ঞানশরণ বৌদ্ধ বিহারে বর্তমানে ৩৫জন ভিক্ষু এবং শ্রমণ অত্যন্ত অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছেন। এদের মধ্যে শিশু-কিশোর বয়সের শ্রমণ রয়েছে ৮ থেকে ১০ জনের মতো। বাকিদের মধ্যে কয়েক জন অসুস্থ্য বৃদ্ধ ভিক্ষু। উনাদের খাওয়া-দাওয়া, চিকিৎসা, লেখা-পড়া ও থাকার জন্য নূন্যতম ব্যবস্থা থাকা দরকার। আমরা দ্বন্ধে বা বিরোধে জড়িত হয়ে মানবতাহীন হতে পারি না। গেরুয়া বসনধারী বা বুদ্ধের চীবর পরিহিত ভিক্ষু-শ্রমনদের বৌদ্ধরা সম্মান -পূজা করে সেখানে এসব নিরপরাধ ভিক্ষু-শ্রমনরা অরক্ষিত,অবহেলিত হয়ে কষ্ঠ পেলে সাধারণ বৌদ্ধরা ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ হওয়ারই কথা।
এখানে অনেক ধরনের পরিবারের সম্ভাবনাময় সন্তানরা আছেন, যাঁরা সমাজের কল্যানে অনেক অবদানও রাখতে পারেন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের সব কিছু চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন আমি আজন্ম একজন আওয়ামী পরিবারের মানুষ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসে বিগত ২৩ বছর ধরে প্রবাসে আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় আছি। বাংলাদেশের বৌদ্ধরা আওয়ামী লীগেরই কর্মী- সমর্থক,যদিও বা দু-চার জন ভিন্ন রাজনীতি করতে পারে বা ব্যতিক্রমী হতে পারে।
শরনংকর ভিক্ষুকে নিয়ে দেশে বিদেশে পাল্টা পাল্টি আন্দোলনে আমি সত্যি বিব্রত বোধ করছি। আশা করি,পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধাবোধ রেখে বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ যদি পুনরায় মন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদের সাথে আরেকটি বৈঠক করেন, ঐ বৈঠকেই সব সমস্যার সমাধান হবে- এ বিশ্বাস আমার আছে।সকলের প্রতি শ্রদ্ধা এবং শুভ কামনা করেন
সুহাস বড়ুয়া (বোষ্টন থেকে)
সাধারণ সম্পাদকঃ নর্থ আমেরিকা বাংলাদেশী বুড্ডিষ্ট ফেডারেশন। (কানাডা ও আমেরিকা)।
সদস্য ও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকঃ নিউ ইংল্যান্ড আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র।