ঢাকা | ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪ - ২:০৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

মান্দায় বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ; অভিমানে এক স্কুল ছাত্রী’র আত্মহত্যা

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Thursday, December 17, 2020 - 3:05 am
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 107 বার

মাহবুবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দায় বিয়ের প্রলোভন দিয়ে এক স্কুলছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে।

বিয়ে করতে অস্বীকার করলে স্কুলছাত্রী নুরুন্নাহার হারপিক খেয়ে আত্মহত্যা করে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোরে মারা যান।

এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের কাঁশোপাড়া গ্রামে বাড়িতে হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই স্কুলছাত্রী।

স্কুলছাত্রী নুরুন্নাহার কাঁশোপাড়া গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক শামছুর রহমান ওরফে খলু প্রামাণিকের মেয়ে এবং কাঁশোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী।

আর উদ্যোক্তা মোখলেছুর রহমান একই গ্রামের শফির তালুকদারের ছেলে এবং কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের উদ্যোক্তা।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্কুলছাত্রী নুরুন্নাহারের ভাই আব্দুল মালেককে চাকুরি দেয়ার লোভ দেখিয়ে মোখলেছুর রহমান গত ৬-৭ মাস আগে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই সময় গরু-ছাগল বিক্রি করে মখলেছুর রহমানকে টাকা দেয় মেয়ের পরিবার। এরপর থেকে মোখলেছুর রহমান মেয়েদের বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু করে। কামরুন নাহার স্কুলে প্রাইভেট পড়তো। করোনা ভাইরাসে স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক সময় মোখলেছুর রহমান সাইকেলে করে তাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসতো।
এমতাবস্থায় এক সন্তানের জনক মোখলেছুর রহমানের সাথে এক সময় তার সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে।

গত ১ অক্টেবার নুরুন্নাহার প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পর বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তাকে নিয়ে পালিয়ে যায় মোখলেছুর রহমান।

এর পাঁচদিন পর মেয়ের পরিবার মেয়েকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।

এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এক পর্যায়ে ক্ষোভের বসে গত ৬ ডিসেম্বর রবিবার সকাল ১০ টার দিকে বাড়িতে কামরুন নাহার হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

পরে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পেরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার ১১দিন পর মারা যায়। ঘটনার পর থেকে মোখলেছুর রহমান পলাতক রয়েছে।

নিহতের বাবা শামছুর রহমান প্রামাণিক বলেন, আমার ছেলেকে চাকরি দিবে বলে মোখলেছুর রহমান ৫০ হাজার টাকা নেয়। এরপর থেকে সে আমার বাড়িতে আসা-যাওয়ার সুবাদে মেয়ের সঙে সম্পর্ক করেছে আমরা বুঝতে পারিনি। সে নাকি আমার মেয়েকে ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘরে বিয়ে করেছে। সেখানে তারা কয়েকদিন সময়ও কাটিয়েছে। যদি বিয়ে করইে থাকবে, তাহলে মেয়েকে তার বাড়িতে কেন নিয়ে যায় না। মেয়েকে ভুল বুঝিয়ে তার সর্বনাশ করেছে এবং আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছে। আমি তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।

মোখলেছুর রহমান এর স্ত্রী জহুরা খাতুন বলেন, স্বামীর পরকিয়ার বিষয়টি জানার পর আমিও হারপিক খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। পরে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আমাকে সুস্থ করা হয়েছে।

মোখলেছুর রহমান এর মা মাকছুদা খাতুন বলেন- মেয়ের পরিবার অভাবি হওয়ায় তাদের আমরা বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করতাম। আমার ছেলের সঙ্গে ওই মেয়ের কোন সম্পর্ক ছিলনা। ওই মেয়ে অন্য কোন কারণে আত্মহত্যা করেছে যা আমার ছেলের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান মোল্লা বলেন, মেয়ের বাবা অভিযোগ করেছিলেন উদ্যোক্তা মোখলেছুর রহমান তার মেয়েকে বিয়ে করেছে কিন্তু বাড়িতে তুলছে না। এছাড়া ওই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে কখনো অবগত করা হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘর উদ্যোক্তার জন্য বরাদ্দ ছিল। ওই ঘরে সবাই যেত। ওই ঘরে কখন অনৈতিক কাজ করেছে সেটা তো বলতে পারবো না।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ঘটনায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে বুধবার আত্মহত্যার প্ররোচনা বিষয়ে মোখলেছুর রহমানকে আসামী করে মামলা করেছেন। রাজশাহীতে মারা যাওয়ায় সেখানে ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

১৬/১২/২০২০