ক্লাবের নামে সরকারি প্রকল্প নিয়ে মসজিদের কাছে চারলাখ টাকায় বিক্রি!
বিশেষ প্রতিনিধি:- রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী বায়তুশ সালাম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের দোকান ঘর নির্মাণ নিয়ে মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন মসজিদ কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এইচ এম আলাউদ্দীন ও মুসল্লিরা। মঙ্গলবার দুপুরে রাঙামাটি শহরের একটি রেস্টুরেন্টে এই সংবাদ সম্মেলন এই অভিযোগ তোলেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে এইচ এম আলাউদ্দীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ভেদভেদি মুসলিম পাড়ায় তারুণ্য ক্লাব নামে একটি সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠন আছে। যে সংগঠন ২০১৯ সালে ক্লাবের নামে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড হতে ১৬ লক্ষ টাকার একটি ক্লাব ঘর বিল্ডিং নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পায়। কিন্তু তারুণ্য ক্লাবের নিজস্ব কোন জায়গা না থাকায় ক্লাবের সকলে মিলে মুসলিম পাড়া টিএন্ডটি মসজিদের বিপরীতে একটি জায়গা দখল করে। যা পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেট এসে ভেঙ্গে অবৈধ দখল মুক্ত করেন। এতে বিপাকে পড়ে তারুণ্য ক্লাবের সংশ্লিষ্টরা। যদি জায়গা দিতে না পারে তবে বিল্ডিং বরাদ্দ আবার ফেরত চলে যাবে তাই তারা একটা নতুন পন্থা তৈরি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মেনেজ করে উক্ত বিল্ডিংটি অন্য কোন স্থানে স্থানান্তর করার প্রসঙ্গ ঠিকঠাক করে এবং তা পার্শ্ববর্তী বায়তুশ সালাম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নামে দোকান ঘর নির্মাণের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় তারা। একে তো ক্লাবের জায়গা নেই তাও তারা ভিন্ন জায়গা দেখিয়ে প্রকল্প আনে তারপর অবৈধ জায়গা দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পরে তা ৪ লক্ষ টাকা দিয়ে বায়তুল সালাম জামে মসজিদের কাছে বিক্রি করে। এখানে এ প্রকল্প আনার পিছনে মূল ভূমিকা ছিলো সাবেক সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু। তিনি তারুণ্য ক্লাবে প্রধান উপদেষ্টা এবং একই সাথে তিনি বায়তুল সালাম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদেরও প্রধান উপদেষ্টা। তার সাথে যুক্ত আছেন বায়তুল সালাম জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক, যিনি আবার ঐ ক্লাবেও একজন। তারা সকলে এ আত্মসাতের পিছনে ভূমিকা রাখে। প্রকল্পের আওতায় পরবর্তীতে দোকান ঘর নির্মাণ করা হলে তা ভাড়া দিয়ে সালামি নেয় মসজিদ কমিটি।’
তিনি আরও বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পারি যে মসজিদের দোকান ঘর বাবদ চার লক্ষ টাকা তারুন্য ক্লাবকে নাকি দিতে হয়েছে। আমি বর্তমান মসজিদ কমিটিতে আসার পরে মসজিদের অনেক সমস্যা দেখতে পেলাম। পরে পূর্বের কমিটির মানুষ সাথে কথা বলে জানতে পারি এ টাকা প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে মসজিদ ফান্ডে এখন কোন টাকা নেই। তারা সরকারি প্রকল্প যেমন প্রতারণা করে নিয়েছে ঠিক তেমনি আবার মসজিদের থেকেও টাকা আত্মসাৎ করেছে। বর্তমানে দোকান ছেড়ে দিয়ে যে ভাড়াটিয়ারা চলে যেতে চাইছে তারা তাদেরকেও সালামির টাকা দিতে পারছে না। এমন করে তারা প্রথমে সরকারের সাথে প্রতারণা করে প্রকল্প নেয়, তা অন্যায় ভাবে বিক্রি করে সেখান থেকেও টাকা আত্মসাৎ করে আবার সাধারণ মানুষের থেকে দোকান দিয়ে সালামি নিয়েও সে টাকার হদিস দিচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই মসজিদের যে টাকা আত্মসাৎ করেছে সে টাকা ফিরিয়ে দেয়া হোক এবং এটার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
আলাউদ্দিন অভিযোগ তোলেন,ক্লাবের কমিটি এবং মসজিদ কমিটির একই নেতৃত্ব হওয়ায় তহবিলের ‘নয়ছঢয়’হওয়ার বিষয়টি বারবার বলেও সমাধান পাচ্ছেন না এবং তারা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না স্থানীয়রা। তাই তিনি সরকারি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের পক্ষে থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবি জানান।
অভিযোগকারি এইচএম আলাউদ্দিন রাঙামাটব পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি। আর যাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ তুলেছেন, তাদের মধ্যে সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি ফিরোজা বেগম চিনু বর্তমানে রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য। চিনু একই সাথে ক্লাব ও মসজিদ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা। মসজিদ কমিটি ও ক্লাবের সভাপতি শাহ ফারুক পিন্টু হলেন ফিরোজা বেগম চিনুর দেবর ও পৌর আওয়ামীলীগের নেতা। সাধারন সম্পাদক আহসানুল হক সরকারি চাকুরিজীবি এবং দুটি প্রতিষ্ঠানেরই সাধারন সম্পাদক।
দোকানের ভাড়াটিয়া সাইদুল ইসলাম মুন্না বলেন, আমি ৮০ হাজার টাকা সালামি দিয়ে দোকান নেয়। আমার ব্যবসা খারাপ যাওয়ায় আমি দোকান ছেড়ে দিলে তারা বকেয়া ভাড়া বাবদ ৩০ হাজার টাকা কেটে নেয়, পরবর্তী বাকি টাকা দিবে দিবে বলে এখনো দেয়নি। টাকা চাইলে আমাকে নানান ভাবে বকাঝকা দেয়। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মসজিদের মুসল্লি আব্দুল গফুর, সাইদুল ইসলাম মুন্না ও সুমন। এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ক্লাবেরও সাধারন সম্পাদক আহসানুল হক বলেন, টাকা ফেরতের বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভায় কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সভায় বলা হয়েছে এভাবে আগের কমিটির সিদ্ধান্ত বদলানোর কোনও সুযোগ আছে কিনা সেটা আমাদের জানা নেই। তিনি আরো বলেন, মুন্না আমাদের ভাড়াটিয়া নন, আমাদের চুক্তি আব্দুল মজিদের সাথে। তিনি আমাদের না জানিয়ে উপ-ভাড়াটিয়া দিয়ে বিদেশে চলে যান। এখন যেহেতু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, পরবর্তী সভায় এসব বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো।