তানোরে সিন্ডিকেটে কমতেই আছে ধানের দাম, লোকসানে কৃষক!
সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহী : রাজশাহীর তানোরে সিন্ডিকেটে দিনের দিন ধানের দাম ব্যাপকহারে কমতেছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রান্তিক কৃষকরা। বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়লেও রহস্যজনক কারণেন কমছে ধানের দাম। প্রতি কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১৯ টাকা বা এক মন ধানের দাম ৭৫০ টাকা, আবার ২ কেজি করে ঢলন। সেইসঙ্গে মনে ৭ টাকা করে খাজনা আদায়। এতে করে কৃষকরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন। ফলে উঠছে না উৎপাদন খরচ। এতে প্রতিবিঘায় ৩ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে, নিজস্ব জমিতে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। অথচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিপণন বিভাগ একেবারেই নিরব।
উপজেলার কৃঞ্চপুর গ্রামের কৃষক মিজান জানান, আলু উত্তোলন করে ২২ বিঘা জমিতে ৭৬ জাতের ধান রোপন করেছিলাম। এরমধ্যে ২০ বিঘা জমি টেন্ডার নেয়া। আর ২ বিঘা নিজের। প্রায় ১৫ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়ায় হয়েছে। এক বস্তা ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকায়। বিঘায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। টেন্ডারের এক বিঘা জমি রোপন থেকে উত্তোলন পর্যন্ত ১৪-১৫ হাজার টাকা খরচ। আর বিঘায় ১৮ মণ করে ফলন হলেও মনে ৭৫০ টাকা দাম পাওয়া যাচ্ছে। হিসেবমতে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা আসে। উর্ধ্বে বিঘায় ২০ মণ হলে ১৫ হাজার টাকা হয়।
একই এলাকার কৃষক মশিউর জানান, কোন জিনিসের দাম কমছে না। ধানের দাম কমলেও চালের দাম তো কমছে না। আলু তোলার পর ৩২ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়ে ২০ বিঘা কাটা মাড়াই হয়েছে। এক বস্তায় ২ মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ টাকায়।
ব্যবসায়ী হাজী সেলিম জানান, গত সোমবার ও রবিবারে প্রতি বস্তা ধান কিনেছি ১৪৫০ টাকায়। কিন্তু মঙ্গলবারে দাম কমে নেমেছে প্রকার ভেদে ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকা করে। কিন্তু চালের বাজার কমেনি।
কৃষক চিমনা গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, আলুর জমিতে যারাই ধান করেছেন তাদেরকেই লোকসান গুনতে হচ্ছে। প্রচন্ড খরতাপ তারপরও কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান উৎপাদন করে খাদ্য ঘাটতি মিটাচ্ছেন। সে অনুযায়ী কৃষকের পরিশ্রমের কোন মূল্য নেই। প্রতি দিন কমছে ধানের দাম, অথচ চালের দাম কমছে না।
চাষের জন্য সার কীটনশকের দাম বাড়তি। আমি টেন্ডারে ৪৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ১৭ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই করেছি। এক বস্তায় ২ মণ ধান গত পাঁচ দিন আগে ১৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি। গত সোমবারে ১৫৫০-১৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ করে মঙ্গলবারে বস্তা প্রতি ১০০-১৫০ ও ২০০ টাকা করে কমে গেল। কোন কারণ ছাড়ায় মিলার ও আড়ৎ দারদের মহাসিন্ডিকেটেই কমছে দাম। কারা এই সিন্ডিকেট করছে, প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করলে সিন্ডিকেট ধরতে পারত।
কিন্তু কৃষি দপ্তরের বিপনণ বিভাগও নিরব। তবে, তাদেরকে প্রতিদিন বাজার দর কেন কমছে। কি কারণে বাড়ছে সে রিপোর্ট দিতে হয়। তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ঘরে থেকে ইচ্ছেমত রিপোর্ট দিচ্ছেন। যদি হাট বাজারে এসে কৃষকের সাথে কথা বলে তাহলে সঠিক রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পারত। এক মণ ধান বিক্রি করে এক কেজি গরুর মাংস কোন রকমে মিলছে।
তিনি আরো জানান, সাবেক মেম্বার পলাশের ১৫ বিঘা, সাহাপুর গ্রামের আবু তাহেরের ৩৫ বিঘা, মাজহারুলের ২০ বিঘা ও নোনাপুকুর গ্রামের কাদেরের ৫০ বিঘা, সাবেক মেম্বার বনকেশর গ্রামের জয়নালের ২০ বিঘা ধান কাটা মড়াই করে লোকসান হয়েছে। এদের দু’চার বিঘা জমি নিজের, বাকি সব টেন্ডারে নেয়া। আর রফিকুল নামের কৃষকের ২০ বিঘা নিজস্ব জমি।তানোরের স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত কৃষক নূর মোহাম্মাদ বলেন, প্রতিদিন ধানের দাম কমছে। ধানের দাম নিয়ে মহাসিন্ডিকেট চলছে।
আবার সরকারিভাবে ৩০ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহ করছেন। কিন্তু প্রচুর হয়রানির জন্য গুদামে ধান দিতে চায় না কৃষকরা। এই সিন্ডিকেট দূর করতে না পারলে কৃষকদের পথে বসতে হবে। কারণ আলু তোলার পর ধান চাষ হয় সেচ নির্ভরে। সেখানেও অরাজকতা, বিঘায় নানা অজুহাতে নিম্মে ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত সেচ হার আদায় করা হয়। আর মটরে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। অথচ সেচ কার্ডের মাধ্যমে হলে নির্ধারিত হারের অর্ধেকের কম খরচ হবে। এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
সম্প্রতি বাজার মনিটরিং বিষয়ে সভা করেন বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব ওয়াদুদ হোসেন, ধানের দাম কেন কমছে কারা সিন্ডিকেট করছে তাদের বিরুদ্ধে বাজার মনিটরিং কমিটিকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এমন নির্দেশনার পরও বাজার মনিটরিং কমিটির দেখা মিলছেনা বলেও কৃষকদের অহরহ অভিযোগ।