ঢাকা | ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪ - ১২:২৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছকির মিয়া

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Monday, May 27, 2024 - 4:32 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 29 বার

মোঃ ইমরান হোসেন মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
আসন্ন ২৯ মে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাবেক সফল চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃআছকির মিয়া মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে ভোটারদের ধারে ধারে গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনাসহ প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগ, পথসভায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এদিকে সাধারণ নেতাকর্মী ও ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আছকির মিয়া অন্যান্য প্রার্থীর চেয়ে আলোচনা, প্রচারণা এবং জনপ্রিয়তায় অনেকটাই এগিয়ে। এর অন্যতম কারন হিসেবে তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা মহামারি মোকাবিলায় তিনি রেখেছেন অসামান্য ভূমিকা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে সময় তিনি মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছেন।

নেতাকর্মীরা আরও বলেন, তাঁর চিন্তা ও চেতনা সমাজের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার। তিনি সর্বদা এলাকার উন্নয়নের চিন্তা করেন ও সেই উদ্দেশ্যে কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাধারণ মানুষের কাছে একজন নিঃস্বার্থ এবং ত্যাগী নেতা হিসাবেই পরিচিতি লাভ করে আসছেন। তাকে নিয়ে এলাকার মানুষ স্বপ্ন দেখেন উন্নয়নের সারথি হিসেবে। উপজেলার সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে সাধারণ মানুষের মাঝে রাষ্ট্রের সকল বরাদ্দের সুষম বণ্টন করবেন এবং এলাকার উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।

সাধারণ মানুষের স্বপ্ন শ্রীমঙ্গল উপজেলা একটি বেকারত্ব ও দারিদ্র্যমুক্ত, দুর্নীতি ও দুঃশাসন মুক্ত স্মার্ট উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। কারণ তাঁর স্বপ্ন উপজেলাকে স্মার্ট বাংলাদেশের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

নির্বাচনের মাঠে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাকাবাসীর কাছে অত্যন্ত সাদামাটা ও ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে দলমত নির্বিশেষে ব্যাপক পরিচিত মুখ তিনি। মানুষের জন্য, মানুষের কল্যানে নিজেকে উৎসর্গ করা এই মানুষটি এলাকায় মানবতার ফেরীওয়ালা হিসেবে সর্বমহলে জনপ্রিয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, ক্রীড়া সার্বিক কল্যানে তার এমন গুনাবলীর কথা এলাকাবাসী এবং বিশিষ্টজনদের মুখে মুখে।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জন্মগ্রহন করেন ১৯৪৭ সালে। ১৯৬৮ সালে এস এস সি পাস করে ভর্তিহন মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে। কলেজে ভর্তি হয়েই পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। এক বছর পর ১৯৬৯ সালে শ্রীমঙ্গল মহাজেরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। একই বছরে দেশব্যাপী গণঅভুত্থান শুরু হলে যোগদেন সে আন্দোলনে। মুক্তিযোদ্ধা আছকির মিয়া জানান, ওই সময় থেকেই  তার রাজনৈতিক কর্মব্যস্ততা ব্যপক আকারে বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে স্বেচ্ছা সেবকলীগের ভুনবীর ইউনিয়ন সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কার পক্ষে দিনরাত কাজ করেন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষনে ছয়তারা টুপি মাথায় বাঁশের লাঠি নিয়ে স্বেচ্ছা সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২৫ শে মার্চ ঢাকায় গণহত্যা ও ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করার পর জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশকে শত্রুমুক্ত করার শপতে বলিয়ান হন। শুরু হয় যুদ্ধে যাওয়ার সাংগঠনিক কাজ। মুক্তিকামী মানুষদের যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন অনেক সহকর্মীসহ ভারতে যান। গেরিলা প্রশিক্ষন শেষে মুজিববাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে একজন গেরিলা যুদ্ধা ও গাইড হিসেবে দেশে প্রবেশ করে অনেকগুলো চুরাগুপ্তা হামলা করেন।

এতে শত্রুবাহিনীর ব্যুহ দূর্বল হলেও তার জীবনে এক মার্মান্তিক ঘটনার অবতারনা ঘটে। অনেকটা অশ্রুসিক্ত নয়নে মুক্তিযোদ্ধা আছকির মিয়া বলেন, দেশে অপারেশন করতে এসে পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে শহীদ হন শ্রীমঙ্গল শহরের ১০ নং এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সমীর সোম, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মো. আব্দুল মুকিত, মৌলভীবাজার বর্ষিজোড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ, সাবিয়া এলাকার কৃপেশ রঞ্জন কর রানু, রাজনগরের সুদর্শন দেব ও জুড়ির বটুলী এলাকার সূখময় পাল। এই সহযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের ঘটনা তিনি আজো ভুলতে পারেন নি। তিনি বলেন, আত্ম বিসর্জন দেয়া এই যোদ্ধাদের দেশপ্রেম কেমন ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করে বুঝানোর মতো নয়। এই রকম সাহসী বীরদের কারনেই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে তিনি পুনরায় শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন এবং পরের বছর ১৯৭৩ সালে পিটিআই প্রশিক্ষন নেন।

আছকির মিয়া জানান, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর তাঁর জীবনের ঝুঁকি আসে এসময় তিনি শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে বেশ কিছুদিন আত্ম গোপনে ছিলেন। পরে ১৯৭৬সালে ভুনবীর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশনিয়ে নির্বাচিত হন। এ সময় তাকেঁ জেলেও যেতে হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পাটির শ্রীমঙ্গল উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯৬ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে জাতীয় পাটির হয়ে সংসদ নির্বাচনেও প্রতিদন্ধিতা করেন।

আছকির মিয়া জানান, ২০০২ সালে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীণ সময়ে তিনি জাতীয় পাটি থেকে রিজাইন দিয়ে প্রায় ২৫০ জন নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকায় জননেত্রী শেখ হাসিনা হাতে ফুল দিয়ে পুনরায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রীয় হন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি নির্বাচিত হন এবং ২০১৮সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
আছকির মিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা, এলাকার প্রবীণ মুরব্বি, রাজনীতিবিদ বা জনপ্রতিনিধিই নন তিনি একজন শিক্ষানুরাগীও।

তিনি জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন ১৯৮৭ সালে তিনি শ্রীমঙ্গল উদয়ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে তৎকালীন সময়ে ব্যপক উন্নয়ন করেন। উদয়ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পাশাপাশি তিনি শ্রীমঙ্গল ডুবাগাও দাখিল মাদ্রাসা, রাজপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। শ্রীমঙ্গল উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ কলেজেরও একজন দাতা সদস্য। বর্তমানে তিনি ভুনবীর দশরত উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।