তানোরে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
সোহানুল হক পারভেজ, রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান: রাজশাহীর তানোর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের নামে অর্থ আত্মসাৎ এবং দপ্তরের বিভিন্ন খাত থেকে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের আগে’ নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যাচমেট পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন। সময়ের ব্যবধানে এখন বিএনপির পরিবারের সন্তান দাবি করে অপকর্ম অব্যাহত রেখেছেন। নিজের অপকর্মে কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী সমর্থন না করলেও তাকে বদলি ও হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। যদিও তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিগত ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর তানোরে তিনি যোগদানের পর কতটি প্রশিক্ষণ প্রকল্প এসেছে,তার বিপরীতে বরাদ্দ কত, কতটি পরিবারকে গরু-ছাগল,হাঁস-মুরগি দেয়া হয়েছে, বর্তমানে সেগুলোর কি অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাইলে ডা, ওয়াজেদ আলী সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলমা ও কামারগাঁ ইউপি এলাকার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্রাম্য প্রাণী চিকিৎসক বলেন, তানোরে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওয়াজেদ আলী যোগদান করেই প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী মেলা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করেন। তারা বলেন, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি প্রকল্প (এলডিডিপি) আওতায় উপজেলা পর্যায়ে পিজি ও নন-পিজি খামারিদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বরাদ্দ আসে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন (ইউপি) থেকে আনুপাতিক হারে প্রশিক্ষণার্থী নেয়া হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ বাবদ সম্মানী ১ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। মোট দুদিন প্রশিক্ষণ করার কথা থাকলেও ১ দিনে সীমিত আকারে সম্পন্ন করেন। এতে নাস্তা ও দুপুরে খাবার বাবদ বরাদ্দ ছিল প্রতি জন ৭০০ টাকা। কিন্তু ১৬০ টাকায় নিম্ন মানের এক বেলা খাবার দেন। প্রশিক্ষণে মোট ১০টি গ্রুপে দুদিনে ২০টি ক্লাস বরাদ্দ ছিল। প্রতি ব্যাচে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার টাকা করে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। পিজি ও নন-পিজি এক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, দুই দিনের প্রশিক্ষণ থাকলেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা একদিনেই প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি প্রকল্প (এলডিডিপি) আওতায় এক্সপোজার ভিজিট, ২৮ মে ২০২৪ এক জেলার পিজি গ্রুপের খামারিদের অন্য জেলায় সফল খামার পরিদর্শন করার বরাদ্দ আসে। এতে খামারি নিয়ে ভ্রমণমূলক প্রশিক্ষণে বরাদ্দ ছিল ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রশিক্ষণার্থীদের বরাদ্দের ৫০০ টাকা দেন। এক জেলার খামারিদের অন্য জেলায় খামার পরিদর্শনের জন্য পরিবহণের খরচ বাবদ বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরিবহণ ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ করেন। খাবার বাবদ বরাদ্দ ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ১৬০ টাকা মাথাপিছু খাবার বিতরণ করেন। পিজি গ্রুপের এক কৃষক বলেন, আমাদের প্রশিক্ষণ ভিন্ন জেলায় নেওয়ার কথা থাকলেও পাশের এলাকায় নিয়ে গল্প গুজব করে প্রশিক্ষণ শেষ করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওয়াজেদ আলী অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,বিভিন্ন প্রকল্প থেকে অডিটের জন্য কিছু টাকা রাখতে হয়। ভ্যাট ট্যাক্স রাখতে হয়, আবার এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ করতে হয়। তাছাড়া প্রশিক্ষণে ব্যাগ, প্যাড, কলম কোথায় পাব এসব। তাই কিছু টাকা খরচের জন্য রাখতে হয়। তবে তার এখানে এসব প্রকল্প নাই।