কবি বিচিত্র কুমার এর গল্প “ডিমের কৌতুক বক্স”
ডিমের কৌতুক বক্স
-বিচিত্র কুমার
একদিন গ্রামের এক ঠোঁটকাটা লোক, যার নাম ছিল ভোলানাথ, সে এক নতুন ব্যবসা খুলতে চলেছে। ব্যবসার নাম দিয়েছিল “ডিমের কৌতুক বক্স”। গ্রামের সবাই অবাক হয়ে বলল, “ডিমের কৌতুক বক্স! এ আবার কেমন ব্যবসা!”
ভোলানাথ সবার দিকে হাসতে হাসতে বলল, “এখানে আসুন, আমি আপনাদের হাসাতে পারব, আর তাও শুধু ডিমের মাধ্যমে!”
গ্রামের সবাই ভাবল, “ভোলানাথ তো আবার নতুন কৌতুকের আসর বসাচ্ছে। চল, দেখে আসি!”
এভাবে প্রথম দিনে গ্রামের বেশিরভাগ লোকজন ভোলানাথের দোকানে হাজির হল। দোকানে প্রবেশ করতেই তারা দেখতে পেল একটি বড় বক্স। বক্সটির ওপর লেখা ছিল “ডিমের কৌতুক বক্স: হাসির ডিমগুলি এখানে!”
ভোলানাথ বলল, “এখন একে একে ডিমগুলো খুলব। প্রত্যেকটি ডিমের সঙ্গে একটি কৌতুক থাকবে। শুনে দেখুন, কত হাসি আসে!”
প্রথম ডিম খুলল ভোলানাথ। ভেতর থেকে বের হল একটি পেঁচানো নোট। সে বলল, “শুনুন, এই নোটে লেখা আছে: ‘ডিম পাড়ার আগে ঘোড়ার মত দৌড়াও, নয়তো মুরগি তোমাকে কোবাব বানাবে!’”
গ্রামের লোকেরা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছিল। কিন্তু ভোলানাথ থামল না। সে দ্বিতীয় ডিম খুলল। এবার ডিম থেকে বের হল একটি উজ্জ্বল সাদা পাঁকা কলা। ভোলানাথ বলল, “এটা কলা, কিন্তু ডিমের মধ্যে কেন? কারণ, ‘কলা থেকে ডিম’—এটা তো একটা অসাধারণ কৌতুক!”
সবার হাসি থামছেই না। এরপর ভোলানাথ তৃতীয় ডিম খুলতে গেলে হঠাৎ করে ডিমটি ফেটে গেল। সবাই ভয়ে পিছিয়ে গেল। কিন্তু ভোলানাথ হাসতে হাসতে বলল, “আরে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই! এই ডিমে কিছু নেই। এর নামই ‘ডিমে নেই’!”
এবারের ডিম থেকে বের হল একটি ছোট্ট কাক। কাকটি একটু ন্যাকামি করে বলল, “বাহ, এই ডিমের মধ্যে এসেছি, কারণ আমি এখানে মুরগির রাজা!”
লোকেরা তখন হাততালি দিয়ে উঠল। তারা বলল, “ভোলানাথ, তুই তো বেশ কৌতুকের ব্যবসা খুলেছিস!”
একসময়, ভোলানাথ একটি বিশেষ ডিম খোলার জন্য অপেক্ষা করছিল। সে বলল, “এবার আমার সেরা ডিমটি খোলার পালা। এটি হলো ‘ডিমের রাজা’!”
সবার চোখ আগ্রহে ভরা। ভোলানাথ ডিমটি খুলতেই সেখানে একটি কাঁকন বের হল। সে বলল, “এই কাঁকন হলো আমার গোপন অস্ত্র। এটা প্রত্যেককে হাসানোর জন্য!”
গ্রামের লোকেরা বলল, “কিভাবে?”
ভোলানাথ আবার বলল, “এটি জাদুকরী কাঁকন! এটি যাকে স্পর্শ করবে, সে হাসতে হাসতে পেটের নাড়িভুড়ি বের করে ফেলবে!”
এখন গ্রামের লোকেরা সকলেই উৎকণ্ঠিত। একজন বলল, “তুমি চেষ্টা কর!”
ভোলানাথ প্রথমে সেই কাঁকনটি নিজের হাতে নিল। সে নিজেকে স্পর্শ করতেই মুহূর্তে তার মুখে বিশাল হাসি ফুটে উঠল। সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছিল।
এরপর ভোলানাথ সিদ্ধান্ত নিল, “এখন গ্রামে গিয়ে সবাইকে স্পর্শ করব!” সে গ্রামের মানুষদের দিকে চলে গেল।
ভোলানাথ কাঁকন দিয়ে সবাইকে স্পর্শ করতেই গ্রামের সবাই হাসতে হাসতে মাটিতে গড়িয়ে পড়তে লাগল। গ্রামের সবার পেটের নাড়িভুড়ি বের হয়ে গেল!
এক মহিলা হেসে বলল, “ভোলানাথ, তুই তো ডাক্তার থেকেও বড় ডাক্তার!”
ভোলানাথ বলল, “ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে একটু হাসুন, তাতে আপনারা সুস্থ থাকবেন!”
গ্রামে এরপর প্রতিদিন ভোলানাথের ডিমের কৌতুক বক্সের জন্য উন্মাদনা বাড়তে লাগল। সবাই আসত হাসতে, এবং ভোলানাথ সেই কৌতুকগুলো রোজ নতুন নতুন বানাত।
একদিন, গ্রামের এক মেয়ে, যার নাম ছিল রিতু, ভোলানাথকে বলল, “ভোলানাথ, তুমি কি আমার জন্য এক বিশেষ কৌতুক বানাতে পারো?”
ভোলানাথ মুচকি হাসল এবং বলল, “অবশ্যই, রিতু। তুমি কি চান?”
রিতু বলল, “আমি চাই, মুরগি এবং কাকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হোক!”
ভোলানাথ ভাবতে লাগল। কিছুক্ষণ পর সে বলল, “তাহলে শুনো!”
“মুরগি: ‘তুমি আমার রাজত্বে কেন এসেছ?’
কাক: ‘কেন? তুমি তো ভাবছো আমি তোমার ডিমগুলো খাব?’
মুরগি: ‘না, আমি ভেবেছিলাম, তুমি আমার সঙ্গী হতে চাও!’
কাক: ‘সঙ্গী? আমি তো রাজা!’”
এখন পুরো গ্রাম জুড়ে হেসে উঠল। ভোলানাথ নিজেও হেসে ফেলল।
এভাবে দিন যেতে লাগল। গ্রামের মানুষ যখন ডিমের কৌতুক বক্সের কথা শুনতে পেল, তখন তারা একত্রে হাজির হল। এই হাসির ব্যবসা থেকে ভোলানাথ এক অন্যরকম জনপ্রিয়তা লাভ করল।
গ্রামের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ভোলানাথের এই হাসির ব্যবসা দেখে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ল। তারা ভাবতে লাগল, “এই ভোলানাথকে একদিন আমাদের ব্যবসার স্থান থেকে সরাতে হবে!”
একদিন তারা ভোলানাথের দোকানে গিয়ে বলল, “ভোলানাথ, আমাদের সাথে বসো। তুমি হাসির ব্যবসা করছো, কিন্তু আমাদেরও কিছু কথা আছে!”
ভোলানাথ বলল, “বলুন, ভাই! আমি তো হাসির জন্যই এখানে আছি!”
তারা বলল, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তুমি আমাদের এলাকার নিয়ম ভঙ্গ করছো। তোমার হাসির কারণে মানুষ আমাদের দোকানে আসছে না!”
ভোলানাথ হাসতে হাসতে বলল, “কিন্তু আমার ব্যবসা তো হাসির জন্যই! যদি আপনারা হাসতে চান, তাহলে এসে শুনুন!”
এই কথায় তারা বেশ বিরক্ত হল। কিন্তু ভোলানাথ তখন হঠাৎ করে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমরা যদি সত্যিই হাসতে চাও, তবে একটা ডিম কিনে নিয়ে যাও, আর প্রতিদিন এখানে আসো!”
গ্রামের মানুষ তখন বুঝতে পারল, সত্যিই ভোলানাথের এই ডিমের কৌতুক বক্স তাদের হাসির খোরাক। ফলে তারা সকলে আবার ফিরে গেল ভোলানাথের দোকানে।
এরপর গ্রামে প্রতিদিনই ভোলানাথের দোকানে ভিড় বাড়তে লাগল। গ্রামের লোকেরা বুঝতে পারল, হাসির মধ্যে রয়েছে জীবনের আনন্দ। ভোলানাথের ডিমের কৌতুক বক্স হয়ে উঠল গ্রামের প্রধান বিনোদন কেন্দ্র।
এভাবেই ভোলানাথ হাসির মাধ্যমে গ্রামবাসীর মন জিতে নিল। আর সেই থেকে “ডিমের কৌতুক বক্স” গ্রামের সবার জন্য এক আনন্দময় কেন্দ্র হয়ে উঠল।
শেষে সবাই এক বাক্যে বলল, “ভোলানাথ, তুই তো আমাদের গ্রামে হাসির রাজা!”
এভাবেই শেষ হল ভোলানাথের হাসির কাহিনী, যা শুধু গ্রাম নয়, বরং আশেপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল।
হাসুন, হাসুন, আর হাসতে থাকুন!
(০২)
ডিমের রাজা ডিমালঙ্কার
একদিন সকালে ডিমের সাম্রাজ্যের একটি সোনালি ডিম ফুটে বের হলো ডিমালঙ্কার। বিশাল, চকচকে, সুন্দর ডিমালঙ্কার রাজপুত্র হওয়ার জন্মলাভ করলেন। পৃথিবীর প্রথম আলো তাঁর সাদা-সাদা ডিমের খোলসের উপর পড়তেই তিনি চমকে উঠলেন। খোলসের ভেতর থেকে যেন পৃথিবীর মধুরতম শব্দ বের হলো, “কুট-কুট-কুট!”
ডিমালঙ্কারের রাজত্ব শুরুর ঠিক পর থেকেই ডিম সাম্রাজ্যে শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়। ডিমালঙ্কারের বিশাল রাজমুকুটটি কুসুমের তৈরি, আর তাঁর সিংহাসনটি ডিমের খোলস দিয়ে গড়া। তিনি যখনই তাঁর সিংহাসনে বসেন, তখন চারদিকে খসখস আওয়াজ হয়, যেমন ডিম ভাঙ্গার সময় হয়। রাজপ্রাসাদের দেয়ালগুলো ছিল ঝিলমিল করা ডিমের ছোপ ছোপ রঙে মাখা। মেঝে জুড়ে ছিল মাখনের মতো মসৃণ, যাতে পা ফেললে মনে হয় সোজা পিচ্ছিল হয়ে যাবে!
ডিমালঙ্কারের রাজ্য পরিচালনার নিয়ম ছিল বেশ অদ্ভুত। তাঁর রাজ্যের প্রতিটি ডিম তাদের নিজস্ব দৌড়ে ছিল ব্যস্ত। কারো দৌড় মিষ্টি বিস্কুটে, কারো দৌড় ডিম পোচে, আবার কেউ দৌড়াচ্ছে হালকা ভাজা ওমলেটে। কেউ কেউ তো আবার ঝাল-ডিমকারির পক্ষে, তাদের রাজ্যের মতোই। কেউ কেউ এতটাই ব্যস্ত যে সরাসরি ফুটে ডিম ড্রপ হওয়ার পথে রওনা হয়েছে!
ডিমালঙ্কারের প্রধান মন্ত্রী ডিমনাথ ছিল এক বিদগ্ধ ডিম, কাঁচা ডিম খাওয়ার বিষয়ে মহাজ্ঞানী। তার কথা অনুযায়ী, “যতদিন তোমার খোলস শক্ত, ততদিন তুমি শক্ত। খোলস ভেঙে গেলে ভেতরের কুসুমে যা খুশি হয়!”
রাজদরবারে ডিমালঙ্কার প্রতিদিন সব ডিমের সাথে মিটিং করতেন। একদিন, রাজসভায় এক অদ্ভুত ঘোষণা হলো। ডিমালঙ্কার বললেন, “আমরা একটা উৎসব করবো। ডিমের রাজ্যে এতদিন যা হয়নি, তা এবার হবে। সবাই নিজ নিজ ডিমসঙ্গীদের সঙ্গে মিলে একসাথে ডিমযুদ্ধে নামবে!”
সব ডিম মহাসমারোহে প্রস্তুতি নিতে লাগল। ডিমরাজ্যে কখনও এমন যুদ্ধের নাম শোনা যায়নি। “ডিমযুদ্ধ” হবে এমন এক উৎসব যেখানে সবাই একে অপরকে ডিমের নানারকম ডিশ তৈরি করে উপহার দেবে, কিন্তু খেলায় আসল মজা হবে ডিম দিয়ে যুদ্ধ করা। হ্যাঁ, ডিম দিয়ে একে অপরকে মারবে! সবার লক্ষ্য হবে, কে কার ডিম ভেঙে ফেলে।
যুদ্ধের দিন এল। রাজ্যের মাঠে সব ডিম একসাথে উপস্থিত হলো। কেউ হাতে নিয়ে এসেছে গরম পোচ, কেউ রান্না করা ডিমকারি, কেউ সেদ্ধ ডিম। কিন্তু আসল খেলা হলো, ডিমের খোলস শক্ত না হলে এই যুদ্ধে টিকবে কীভাবে? তাই ডিমালঙ্কার ঘোষণা করলেন, “যে ডিমের খোলস সবচেয়ে শক্ত, সে-ই হবে বিজয়ী!”
যুদ্ধ শুরু হলো। ডিমরা একে অপরকে ছুড়ে মারছে, ডিমের খোলস ভাঙছে। মাঠজুড়ে যেন ডিমের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই, এক বিশাল ডিমরাজ ডিমালঙ্কার নিজেই লড়াইয়ে নেমে গেলেন। তাঁর সাথের ডিমসঙ্গী ডিমভাজা বলল, “মহারাজ, আপনি নামলে তো সবাই পেছনে পড়ে যাবে!” কিন্তু ডিমালঙ্কার হাসতে হাসতে বললেন, “আজ ডিমের রাজা নিজের শক্তি পরীক্ষা করবেন!”
ডিমালঙ্কার তাঁর বিশাল সোনালি ডিম ছুড়ে মারলেন প্রতিপক্ষের দিকে। কিন্তু হঠাৎ তাঁর খোলস টুকরো টুকরো হয়ে গেল! ডিমালঙ্কার মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, তাঁর মাথার মুকুটের কুসুম ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। রাজ্যের সবার পেট খিল ধরে হাসতে লাগল। সবাই ভাবল, “রাজা নিজেই তার ডিম ভেঙে ফেলল!”
অবশেষে, যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটল। যাদের ডিমের খোলস ভেঙেছে তারা হাসিতে লুটিয়ে পড়েছে। ডিমালঙ্কার মজা করে বললেন, “আমাদের রাজ্যের আসল সৌন্দর্য ডিমের খোলসে নয়, মজা করার সামর্থ্যে!”
সেই দিন থেকেই ডিমরাজ্যের নিয়ম হলো, বছরে একবার ডিমযুদ্ধ উৎসব করা হবে। সেই উৎসবের একমাত্র নিয়ম—হার-জিত নয়, শুধু মজা!
(০৩)
ডিমের হিরো এবং ভিলেন
একটা ছোট্ট শহরের বাসিন্দারা হঠাৎ করেই এক নতুন মজার অভিজ্ঞতায় পড়ল। শহরে দুই ডিমের আবির্ভাব হলো—একটির নাম ডিমু হিরো, আর অন্যটির নাম ডিমু ভিলেন। এই দুই ডিমের কারণেই শহরের রোজকার জীবনটা পুরোপুরি বদলে গেল।
ডিমু হিরো ছিল আলাদা। দেখতে মোলায়েম, একদম সাদা আর চকচকে। তার ভেতরে ছিল এক জাদুকরী ক্ষমতা। যখনই শহরের কেউ কোনো সমস্যায় পড়ত, ডিমু হিরো পটাস করে ফেটে গিয়ে আশ্চর্য জিনিস বের করত। একদিন তার ভেতর থেকে বের হলো গরম এক কাপ চা, অন্যদিন একটা স্যান্ডউইচ, আর কখনো বা চকোলেট কেক! বাচ্চাদের কাছে সে ছিল সুপারহিরো। তারা প্রতিদিন ডিমু হিরোর আশেপাশে ভিড় জমাত, “ডিমু হিরো! আজ তুমি আমাদের কী চমক দেখাবে?” ডিমু হিরো হেসে উত্তর দিত, “বন্ধুরা, চিন্তা করো না, আমি আছি।”
কিন্তু ডিমু হিরোর ঠিক বিপরীতে ছিল ডিমু ভিলেন। দেখতে একদম কালো আর ভয়ংকর, আর তার একটাই কাজ ছিল—মানুষকে নানাভাবে বিরক্ত করা। শহরের বাসিন্দাদের সে খোলা ডিমের খোসা খাওয়াতে চাইত, আর ভিতরের মজাদার অংশ সব নিজেই খেয়ে ফেলত। বাচ্চারা ভয়ে ডিমু ভিলেনের কাছে যেত না। একদিন বড় একটা ব্রেকফাস্ট ফেস্টিভাল চলাকালীন ডিমু ভিলেন ঘোষণা দিল, “আজ থেকে আমার নিয়ম চলবে! সবাই শুধু ডিমের খোলস খাবে, ভিতরের সব আমি খেয়ে ফেলব!”
এই খবরে শহরজুড়ে হৈচৈ পড়ে গেল। কেউ ভাবতে পারছিল না, কীভাবে এই বিপদ থেকে মুক্তি মিলবে। তখনই কেউ একজন ডিমু হিরোর খবর দিল। ডিমু হিরো খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফেস্টিভালে ছুটে এলো। বাচ্চারা তার চারপাশে ঘিরে ধরল, “তুমি নিশ্চয়ই আমাদের বাঁচাতে পারবে!” ডিমু হিরো বলল, “ভয় পেও না, আমি এসেছি।”
ফেস্টিভালে ঢুকেই ডিমু হিরো ডিমু ভিলেনকে চ্যালেঞ্জ করল, “তুমি যদি সত্যিকারের ডিম হও, তাহলে লড়াই করে দেখাও।” ডিমু ভিলেন ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, “তুমি আমাকে থামাতে পারবে না! আমার ক্ষমতা অনেক!” কিন্তু ডিমু হিরো শান্তভাবে বলল, “তাহলে দেখি তোমার ক্ষমতা কতটুকু।”
এই বলে ডিমু হিরো পটাস করে ফেটে গেল, আর ভেতর থেকে বের হলো বিশাল এক ফ্রাইং প্যান। “তুমি যদি ডিমের ভেতরের অংশ এতই পছন্দ করো, তাহলে সবাইকে ভালো কিছু খেতে দাও!” ডিমু ভিলেন স্তম্ভিত হয়ে গেল। সে তো ভাবছিল, লড়াই হবে শক্তির, কিন্তু এখানে ডিমু হিরো তাকে রান্নার প্রস্তাব দিল!
ডিমু ভিলেন জেদ ধরে প্যানটাতে ডিমের ভেতরের অংশ টেনে নেয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু ডিমু হিরো ততক্ষণে সেগুলো দিয়ে সুস্বাদু অমলেট বানিয়ে ফেলল! শহরের মানুষজন অমলেট খেয়ে চিৎকার করে বলল, “এই তো আমাদের হিরো!”
ডিমু ভিলেন বুঝল, হিরোর মতো ভালো কিছু করা অনেক বেশি আনন্দের। সে ধীরে ধীরে মাথা নিচু করে বলল, “আমি আর দুষ্টামি করব না। আমিও তোমাদের মতো ভালো কিছু করতে চাই।”
ডিমু হিরো তাকে বলল, “তাহলে এসো, আমাদের সঙ্গে থাকো। মজা করে ভালো কিছু তৈরি করা দুষ্টামি করার চেয়ে অনেক ভালো।”
এইভাবে ডিমু ভিলেনও ডিমু হিরোর সঙ্গে মিলে শহরের মানুষদের সুস্বাদু খাবার তৈরি করে খাওয়াতে শুরু করল। শহরের বাচ্চারা আবার আনন্দে খেলতে লাগল, আর ডিমু হিরো আর ডিমু ভিলেন মিলে সবাইকে খুশি রাখল।
আর সেই থেকে শহরের মানুষরা সবসময় বলত, “ডিমু হিরো আর ডিমু ভিলেন ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনাই করা যায় না!”
(০৪)
তিন পাগলের বিয়ে
একটা ছোট্ট গ্রামে ছিল তিনজন বিখ্যাত পাগল—হারু, শফি, আর কার্তিক। তাদের পাগলামি ছিল একেবারে আলাদা আলাদা ধাঁচের। হারু সবসময় নিজেকে রাজা মনে করত, ময়লা একটা পুরোনো টুপি মাথায় দিয়ে গ্রামের মধ্যে হাঁটত আর ঘোষণা দিত, “আমি তোমাদের রাজা! সবাই আমার প্রজা!” শফি ছিল উল্টো পাগল, সে সবকিছু উল্টো দেখত—মানুষকে গাছ ভাবত, আর গাছের সাথে গল্প করত। আর কার্তিক ছিল পুরোপুরি বিয়ে পাগল, তার মাথায় দিনরাত ঘুরত শুধু বিয়ের কথা। সে দাবি করত, “আমি বিয়ে করব সূর্যকে!”
একদিন তিনজন মিলে একসাথে বসল। হারু বলে উঠল, “আমার রাজ্যে বিয়ে হবে, রাজা তো একটা রানী চাই!” শফি সঙ্গে সঙ্গে সায় দিল, “ঠিক বলেছ! কিন্তু আমরা তো মানুষ নই, গাছদের বিয়ে করতে হবে!” কার্তিক তার স্বপ্নের বউকে খুঁজে নিয়ে বলল, “আমার বউ হবে সূর্য! আমি সূর্যকেই বিয়ে করব!”
তারা মিলে মহা বিয়ের আয়োজন করল। গ্রামে সাড়া পড়ে গেল। ঠিক হলো, হারু বিয়ে করবে একটা বিশাল তালগাছকে, শফি বিয়ে করবে এক লম্বা বাঁশগাছকে, আর কার্তিক বিয়ে করবে আকাশের সূর্যকে। বিয়ের দিন সকাল থেকেই মণ্ডপে ঢোল, করতাল, আর বাঁশির আওয়াজে উৎসব শুরু হয়ে গেল।
বিয়ের দিন তিনজন সেজেগুজে হাজির হলো। হারু গায়ে রাজকীয় পোশাক, মাথায় তার টুপির জায়গায় বটগাছের ডাল নিয়ে তালগাছের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “এই হলো আমার রানী!” শফি বাঁশগাছের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “তুমি আমার গাছ, আর গাছের মতো শক্তিশালী বউ!” আর কার্তিক আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্য খুঁজে চিৎকার করল, “তুমি আমার বউ, সূর্য! তুমি কোথায়?”
গ্রামের মানুষ হাসতে হাসতে পাগল প্রায়। এক বাচ্চা এসে হারুর পাশে দাঁড়িয়ে মজা করে বলল, “রাজা, তোমার রানী কথা বলছে না!” হারু গম্ভীর মুখে বলল, “রানীরা রাজাদের সামনে সবসময় চুপ থাকে। বোঝো না?”
শফি তখন মগ্ন হয়ে তার বউ, মানে গাছের সাথে কথা বলছে। সে গাছের কাছে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?” গাছ তো কোনো উত্তর দেয় না। শফি হেসে বলল, “লজ্জা পেয়েছে, তাই কিছু বলছে না!”
কার্তিক তখন সূর্যের জন্য অপেক্ষা করতে করতে হতাশ। হঠাৎ মেঘ এসে সূর্য ঢেকে দিল, কার্তিক চিৎকার করে উঠল, “আমার বউ পালিয়ে গেল! সূর্য কোথায়?” এই শুনে গ্রামের সবাই হেসে গড়িয়ে পড়ল। কার্তিক তখন মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আচ্ছা, মেঘও বউ হতে পারে, তুমি আমার বউ হবে!”
বিয়ের এমন মহা নাটক দেখে গ্রামের মানুষদের হাসি থামছেই না। সবাই বলছে, “এমন পাগলের বিয়ে আমরা জীবনে দেখিনি!” কেউ বলছে, “এরা পাগল না, মস্ত বড় বুদ্ধিমান, কারণ আমাদের এমন আনন্দ কেউ কখনো দেয়নি!”
শেষমেশ তিন পাগলের বিয়ে ঠিকঠাক হলো কিনা কেউ জানে না, কিন্তু তাদের পাগলামি দেখে গ্রামের মানুষের পেটে ব্যথা হয়ে গেল হাসতে হাসতে। এই মজার বিয়ের গল্প সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল আর সবাই হাসিতে লুটোপুটি খেল!