কুষ্টিয়ার ইবি থানার বিত্তিপাড়া বাজারে মা ফার্মেসীতে মিলছে নেশার ট্যাবলেট
কুষ্ঠিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ইবি থানার উজানগ্রাম ইউনিয়নের বিত্তিপাড়া বাজারে মা ফার্মেসিতে দিনে-সন্ধ্যার পর থেকেই ট্যাপেন্টাখোরদের অবাধ চলাফেরা চলে। গত মঙ্গলবার আনুমানিক বিকেল ৫ টার সময় এক যুবক কে অস্বাভাবিবক ভাবে চলাফেরা করতে দেখা গেলে তার কাছ থেকে ট্যাপেন্টা ও ঘুমের ওষুধ পাওয়া যায়।
এই ওষুধ কোথায় পেয়েছে জানতে চাইলে সে বলেন মা ফার্মেসী থেকে কিনেছে বলে জানায়। কতদিন ধরে মা ফার্মেসী থেকে ট্যাপেন্টা কিনছে জানতে চাওয়া হলে সে বলে ২০-২৫ দিন ধরে নিয়মিত মা ফার্মেসী থেকে কোন ব্যবস্থাপত্র ছাড়ায় ট্যাপেন্টা ও ঘুমের ওষুধ ক্রয় করছে।
ট্যাপেন্টাখোরদের কারনে বিত্তিপাড়া বাজারে এলাকায় চুরি, ছিনতাই সহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম বৃদ্ধি পেয়েছে। নেশাগ্রস্থ্য যুবক নেশার টাকা যোগার করার জন্য বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
নেশাগ্রস্থ্য যুবকেরা বাজারের মধ্যে অবস্থান করা মানুষের কাছে তাদের মা, বাবা, ভাই, বোন বা আত্মীয় মার্কেট করতে আসলে তাদের কাছে কোন প্রকার অর্থ নেই বলে সাহায্য চাই। কেউ সাহায্য করলে সেই টাকা নিয়ে গিয়ে মা ফার্মেসী থেকে ট্যাপেন্টা, ঘুমের ওষুধ ও কাঁশির সিরাপ নিয়ে রাতভর নেশা করে।
কয়েকজন নেশাখোর রাতে এক হয়ে আশে পাশের লোকজনদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা, ঘড়ি ও মোবাইল ছিনতাই করে বলেও জানা যায়।
মা ফার্মেসী সামনে উঠতি বয়স্ক তরুনদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। এইসব ট্যাপেন্টা ও ঘুমের ঔষধ গুরুতর অসুস্থ্য, দুর্ঘটনায় আহত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ লোকজনের ঘুমের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করা হয়। এইসব ঔষধ ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও অতি মুনাফার আশায় বিক্রি করছে মা ফার্মেসি আর সুযোগ নিচ্ছে মাদকসেবীরা।
বিপথগামী স্কুল পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়া তরুণ সমাজ আজ ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে মাদকরুপী ট্যাপেন্টা ও ঘুমের ঔষধের কারনে। প্রেসসক্রিপশন ছাড়া মা ফার্মেসিতে এমন অবাধ উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রি হওয়ায় সচেতন মহল ও অভিভাবকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইয়াবাসেবীদের কাছে এখন এসকেএফ ওষুধ কোম্পানির ট্যাপেন্টা ট্যাবলেটের ব্যাপক চাহিদা দেখা দিয়েছে। বাজারে এ ট্যাবলেটটির দাম হু হু করে বেড়ে উঠেছে। বর্তমানে ৫০ মিলিগ্রাম একটি ট্যাবলেটের মূল্য ৫০ থেকে ৭০ টাকা এবং ১০০ মিলিগ্রাম একটি ট্যাবলেটের মূল্য ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার কোম্পনি মূল্য ৫০ মিলিগ্রাম প্রতি ট্যাবলেটের দাম ১২ টাকা এবং ১০০ মিলিগ্রাম প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ২২ টাকা।
দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবাসেবনকারীরা ইয়াবা ট্যাবলেট চোরাই পথে নিয়ে এসে নেশা হিসেবে ব্যবহার করত। কিন্তু বাজারে এর চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রশাসনের নজরদারি বেশি হওয়ায় ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে সেবনকারীদের নেশার মাত্রা বেড়ে যায়। এরই সুযোগে এক ধরনের নেশায় আসক্তরা ওষুধ কোম্পানি এসকেএফ লিমিটেডের ট্যাপেন্টা ট্যাবলেটটি নেশা হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। তারা ইয়াবার বিকল্প হিসেবে এখন এ ট্যাবলেট সেবন করছেন।
সম্প্রতি সময়ে কুষ্টিয়া পুলিশের মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের কারনে কুষ্টিয়া সহ পাশ্ববর্তী অঞ্চলে মাদক প্রায় নির্মূলের পথে। ফলে মাদকসেবীরা মাদকের পরিবর্তে চেতনানাশক ঔষধের দিকে ঝুকে পরেছে। বিত্তিপাড়া বাজারের মা ফার্মেসীতে চলছে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ঔষধ বিক্রির রমরমা ব্যবসা। মা ফার্মেসি ঔষধ বিক্রির অন্তরালে নেশাজাতীয় ট্যাপেন্টা, ইনজেকশন ও ঘুমের ট্যাবলেট বিক্রয় করছে অধিক মুনাফা লাভের আশায়।
ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজার পাশাপাশি এবার নেশার রাজ্যে যুক্ত হয়েছে ট্যাপেন্টা ও ঘুমের ট্যাবলেট। বিভিন্ন ধরণের ঘুমের ট্যাবলেট মাদক সেবীদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নেশার ক্ষেত্রে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষনার পর থেকে মাদক সেবীরা মাদকের বিকল্প হিসেবে ঝুঁকে পড়েছে বিভিন্ন কোম্পানীর ঘুমের ট্যাবলেটের উপরে। হাত বাড়ালেই মা ফার্মেসী অনায়াসে মিলছে ঘুমের ট্যাবলেট।
সরকারী নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে দেশের নামী দামী বিভিন্ন কোম্পানীর ঘুমের ট্যাবলেট বিক্রয় করছে মা ফার্মেসী। যদিও সরকারি নীতিমালায় ঘুমের ঔষধ বিক্রির ক্ষেত্রে, ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র প্রয়োজন।
এ বিষয়ে মা ফার্মেসীর মালিক সিরাজুল ইসলামের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান আগে বিক্রয় হয়তো এখন বিক্রয় করি না।
এবিষয়ে কুষ্টিয়ার ড্রাগ সুপার বলেন, ২০১৬সালের ঔষধ আইন অনুযায়ী মাত্র ৩৯টি ঔষধ প্রেসসিকশন ছাড়া বিক্রয় যোগ্য। ট্যাপেন্টা, ঘুমের ঔষধ, ডেসপোটেন, সিনামিন এগুলি প্রেসসিকশন ছাড়া বিক্রয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়া ঘুমের ঔষধসহ ১৮টি ঔষধ প্রেসসিকশন ছাড়া বিক্রয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের আইনের মধ্যে পড়ে।