ঢাকা | ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪ - ৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

নওগাঁয় প্রভাবশালীদের দেওয়া ইটের প্রাচীরে ২১ মাস অবরুদ্ধ একটি পরিবার

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Sunday, December 27, 2020 - 3:04 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 111 বার

রহমতউল্লাহ আশিকুজ্জামান নুর, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি : নওগাঁয় রানীনগরে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির দেওয়া ইটের প্রাচীরে ২১ মাস অবরুদ্ধ করে রাখা বাড়ির বাহিরে অসহায় জীবন যাপন করছে এক পরিবার। এ যেন এক নিষ্ঠুরতম আচরন ক্ষমতার অন্ধকূপে আজ মানবতা লুকিয়ে।

সূত্র মতে, নওগাঁর রাণীনগরে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রায় ২১মাস ধরে ইটের প্রাচীর দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে রিপন উদ্দিন শাহার বসতবাড়ী। নিজ গৃহে প্রবেশ করতে না পেরে অসহায় অবস্থায় বউ বাচ্চা ও এক বৃদ্ধাকে নিয়ে জীবন পার করেছেন মানুষের ধারে ধারে।

জানা গেছে, উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঘোষ গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে রিপন উদ্দিন শাহ্ ঘোষ গ্রাম মৌজার ৪৮২ খতিয়ানে ৬১৬ দাগে তার পৈত্রিক সম্পত্তির ৩শতক জমির উপর প্রায় ১০ বছর আগে টিনশিটের একটি বাড়ি তৈরি করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বাড়ি পাশে অবশিষ্ট জাগায় নানা জাতের গাছপালা ও শাক সবজির বাগান করে কোন রকম দুঃখ কষ্টে জীবন পারকছেন।

রিপনের দাদি আম্বিয়া বেগম নাতি রিপন ও তার বোনদের গত ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাণীনগর সাব-রেজিস্টার অফিসে ৫১৯৩ নং দলিলমূলে ৩ শতক জমি লিখে দেন। শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল ও বসবাসের এক পর্যায়ে গত বছরের মার্চ মাসে রিপন শাহ্ তার পরিবারসহ আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যায়।
এই সুযোগে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক স্থানীয় প্রভাবশালী জিয়ার উদ্দিনের ছেলে আব্দুল বারিক সরদার তার ভাড়াটিয়ে লোকজন নিয়ে রিপনের বসতবাড়ির চারিদিকে ৫-৭ ফিট উঁচু করে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলেন। রিপন মই দিয়ে প্রাচীর টপকিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলেও চারিদিকে ইটের প্রাচীর অবরুদ্ধ থাকায় তার নিজ বাড়িঘর ছেড়ে স্বজনদের নিয়ে অন্যের বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এই নিয়ে ভোক্তভোগী রিপনের সাথে কথা হলে রিপন জানান, এই জাগা আমার পৈতৃক সম্পত্তি। আমি ও আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো রকম দিন মজুরি করে জীবন যাপন করছি, কিন্তু হঠাৎ একদিন আমরা আত্মীয়দের বাড়িত থেকে ফিরে দেখি আমার বাড়ির চারপাশে ইটের উঁচু প্রাচীর। এই নিয়ে আমি সবার কাছে বিচারের জন্য ধর্না দিয়েও কোন বিচার পাইনি আমি ও আমরা পরিবারের সদস্যদের এবং বৃদ্ধা দাদীকে নিয়ে এখন রাস্তায় রাস্তায় অন্যের বাড়িতে অসহায় অবস্থায় জীবন পার করছি।

এখন সঠিক যদি বিচার না পায় তাহলে পরিবারের সদস্যরা একযোগে আত্মহত্যা করার পথ বেছে নিতে হবে বলেও জানান তিনি।

এলাকাবাসীর মতে, ভুক্তভোগী রিপন বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিকভাবে জানালে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বারিক সরদারকে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ডেকে পাঠায়। কিন্তু তার ডাকে উপস্থিত না হয়ে বহিরাগত লোকজন নিয়ে প্রাচীরটি আরো মজবুত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। রিপনের পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিয়ে মানবিক আর্তনাদ করেও অদ্যবদি কোনো ফলাফল না পেয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানালে তারা ঘটনাস্থলে গেলে প্রভাবশালী বারিকের লোকজনরা ওই পরিবারের সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। এমনকি তারা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন রকমের হুমকি-ধামকি প্রদান করে।

অভিযুক্ত আব্দুল বারিক সরদারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ।

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-মামুন জানান, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বারিক উদ্দিনকে জমির কাগজপত্র নিয়ে আসতে বললেও বারিক আসেননি।

এলাকাবাসীর দাবি বিষয়টি একটি সুষ্ঠু তদন্তে মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং একজন নিরীহ মানুষের বসবাস করার সুযোগ করে দেওয়া হোক।