ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ৫:৩৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত সেতু প্রকৌশলবৃত্তান্ত

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Thursday, December 10, 2020 - 5:40 am
  • admin
  • পঠিত হয়েছে: 167 বার

বাংলাদেশে নদ-নদীগুলো ছড়িয়ে আছে জালের মতো। নদীগুলো প্রকৃতিকে করেছে শোভামণ্ডিত। এই ভূখণ্ডকে করেছে ঐশ্বর্যমণ্ডিত। ঐতিহাসিকভাবেই এই অঞ্চলের নদ-নদীর গতি–প্রকৃতি ও প্রবাহ জটিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও নদীগুলোকে অতিক্রম করে স্থায়ী যোগাযোগের মাধ্যম সৃষ্টির আগ্রহটা মানুষের চিরন্তন। এখনো গ্রামগঞ্জে এমন বাঁশের সাঁকোর দেখা মিলবে। গ্রামে কোনো খাল পারাপারের জন্য অন্য মাধ্যম থাকলেও মানুষের আগ্রহ থাকে স্থায়ী সাঁকোর দিকে। সব আবহাওয়ায়, রাতে-দিনে স্থায়ী যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে স্থায়ী সেতুর আবেদন চিরন্তন। বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ আজ নদী ও সাগরের ওপরও সেতু নির্মাণের সামর্থ্য রাখে। এ জন্য যুগ যুগ ধরে মানুষ জ্ঞান আহরণ করছে, যাতে এই সেতু নির্মাণযোগ্য, সহজলভ্য, ব্যবহারযোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। সব প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, যেমন: ভূমিকম্প, বন্যা, খরা ও অন্যান্য মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করে থাকে। সেতুর জন্য প্রয়োজন হয় সঠিক উপকরণ ভিত্তি ও কাঠামো নির্বাচন। স্থানীয় মালামাল ও প্রযুক্তির ব্যবহার করলে সেতুর নির্মাণকাজে খরচ অনেক কম হয়। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও নির্মাণশৈলী সেতুকে দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক করতে পারে।

সেতুর বিভিন্ন অংশ
চিত্র ১-এ সেতুর বিভিন্ন অংশ দেখানো হয়েছে। সেতুর উপরিকাঠামো ছাড়াও সেতুর ভিত্তি, নদীশাসন, তীর রক্ষা, নৌচলাচল, ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যবস্থার সংযোজন সেতু প্রকৌশলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সেতুর প্রস্থ নির্ধারণের জন্য এর নিকট ও দূরবর্তী জনগোষ্ঠীর ব্যবহারের উপযোগিতার প্রয়োজন যাচাই করা দরকার। এ ছাড়া নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কৌশল আয়ত্ত ও চর্চা করা জরুরি। একটি সেতু এভাবেই সামগ্রিকভাবে সমাজের অংশ হয়ে ওঠে। সেখানেই সেতু প্রকৌশলীর সার্থকতা।

বিজ্ঞাপন

সেতু তৈরির উপকরণ
সেতু প্রকৌশলবৃত্তান্ত
বাঁশ: বাঁশ হচ্ছে ঘাস পরিবারের বৃহত্তম সদস্য। আদিকাল থেকেই ঘরবাড়ি বা সাঁকো (পায়ে চলার ছোট সেতু) তৈরিতে বাঁশ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখনো ছোট নদী–নালা পারাপারের জন্য বাঁশের তৈরি সাঁকো ব্যবহার করে।

সেতু প্রকৌশলবৃত্তান্ত
কাঠ: যুগ যুগ ধরে মানুষ কাঠকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। তা ছাড়া ঘরবাড়ি, যন্ত্রপাতি তৈরি ছাড়াও ছোট দৈর্ঘ্যের সেতু তৈরিতে কাঠ ব্যবহার করা হয়।

ইট বা পাথরের গাঁথুনি: মোগল আমলে এই অঞ্চলে ছোট নদী-নালা পারাপারের জন্য ধনুক আকৃতির আর্চ সেতু তৈরিতে পোড়ামাটির ইট বা পাথরের প্রচলন ছিল।

সেতু প্রকৌশলবৃত্তান্ত
ইস্পাত: লোহা ও কার্বনের সংকর ইস্পাত, যা নির্মাণসামগ্রী হিসেবে বহুল ব্যবহৃত উপকরণ। ব্রিটিশ আমলে অনেক ইস্পাতের তৈরি ট্রাস সেতু ও গার্ডার সেতু তৈরি হয়। (ছবি ৩)

সেতু প্রকৌশলবৃত্তান্ত
কংক্রিট: সিমেন্ট, বালু, খোয়া ও পানির যথাযথ মিশ্রণে তৈরি কংক্রিট সেতু তৈরির একটি আধুনিক উপকরণ। ব্রিটিশ-পরবর্তী সময়ে এ দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেতু নির্মাণে এর ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। রিইনফোর্সড কংক্রিট ও প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট—এই দুই ধরনের কংক্রিটে সেতু তৈরি হয়। সাধারণ কংক্রিটের চাপ ও আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা কম। তাই ইস্পাতের খাঁচার চারদিকে কংক্রিট জমিয়ে তাকে অত্যন্ত শক্ত, ঘাতসহ করা হয়। এ ধরনের কংক্রিটকে রিইনফোর্সড কংক্রিট বলা হয়। রিইনফোর্সড কংক্রিটের সেতু হলো কংক্রিট ও ইস্পাতের দণ্ডের সমন্বয়ে তৈরি সেতু। প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট হলো কংক্রিট ও ইস্পাতের তারের সমন্বয়ে পূর্ব টানে তৈরি সেতু।

সেতু প্রকৌশলবৃত্তান্ত
পলিমার: বর্তমানে অতি উচ্চ টান নেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন পলিমার সেতু তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো সাধারণত কার্বন বা গ্লাসের আঁশের সমন্বয়ে তৈরি যৌগ।

সেতু প্রকৌশলবৃত্তান্ত
রাবার: রাবার প্রধানত ব্যবহৃত হয় সেতুর পাটাতন বহনকারী গার্ডারের নিচে শেষ প্রান্তে, যাতে সেতু শীত-গ্রীষ্মে, দিনে-রাতে তাপমাত্রার পরিবর্তনে এবং যানবাহনের চলাচলের সময় প্রসারণ-সংকোচন ও নড়াচড়া সহ্য করতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ ধরনের রাবার বিয়ারিং সেতুকে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি থেকে রক্ষা করে।

কাঠামোভেদে সেতু
সেতু প্রকৌশলবৃত্তান্ত
আর্চ সেতু: আর্চ হলো ধনুক আকৃতির এমন একটি কাঠামো, যার বিস্তার থাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খোলা জায়গাজুড়ে এবং সেটি ওই জায়গার ওপর সম্পূর্ণ কাঠামোর ভার বহন করতে সাহায্য করে। একে অনেকে খিলানিও বলে। আর্চ দিয়ে সাধারণত বিভিন্ন অলংকৃত তোরণ ও দালানকোঠার সামনের অংশ নির্মাণ করা হলেও অন্যান্য নানা ধরনের অবকাঠামো, যেমন বিভিন্ন সেতু নির্মাণে এর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।

সেতু প্রকৌশলবৃত্তান্ত
ব্যালান্সড ক্যান্টিলিভার সেতু: এ ধরনের সেতুর পাটাতন তার স্তম্ভের দুদিকে ভারসাম্য বজায় রেখে বিস্তৃত থাকে।

সাধারণ সেতু: এ ধরনের সেতুর পাটাতনের দুই প্রান্তে বিশেষ অবলম্বনের ওপরে ভর করে থাকে। এ ধরনের সেতু সাধারণত কংক্রিট বা ইস্পাতের তৈরি হয়। ইস্পাতের সেতু মূলত গার্ডার বা ট্রাসের তৈরি হয়। অন্যদিকে, কংক্রিটের সেতু স্ল্যাব, গার্ডার, বক্স গার্ডার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।

সেতু প্রকৌশলবৃত্তান্ত
ঝুলন্ত সেতু: এ ধরনের সেতুর পাটাতন মূলত ইস্পাতের তারের মাধ্যমে বিশেষ কায়দায় ঝুলে থাকে। স্টেইড ও সাসপেনশন সেতু ঝুলন্ত সেতুর দুটি প্রধান প্রকারভেদ।