পালিচড়ায় দাদন ব্যবসায়ীর দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন
রেখা মনি, রংপুর ব্যুরোঃ রংপুর সদর উপজেলায় দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল হাসান কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পিবিআইসহ বিকল্প সংস্থা দিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।মানববন্ধনে ভুক্তভোগীর পরিবার ও সাধারণ জনগন উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার বিকালে রংপুর সদর উপজেলার ৪নং সদ্যপুষ্করিনী ইউনিয়নের পাঁচ নং ওয়ার্ডের পালিচড়া গ্রামের দোলাপাড়ায় এই মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা। মানবন্ধনে ইউনিয়নের রামজীবন মন্ডলপাড়ার ফারুখ মিয়ার ছেলে দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল হাসানের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবী করেন ভুক্তভোগীরা।
মানবন্ধনের প্রেস রিলিজ থেকে জানা যায়,পারিবারিক অসুবিধার কারণে নাজমুল হাসানের কাছ থেকে বছরে দুইবার ২৫ মণ করে ধান দেওয়ার শর্তে ৭০,০০০/-(সত্তর হাজার)টাকা দাদন নেন একই ইউনিয়নের পাশের গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান।সেই মোতাবেক গত চার বছরে দুইশত মণ ধান লভ্যাংশ হিসাবে বুঝিয়ে দেন।পাশাপাশি ধারকৃত নেওয়া দাদনের মূল ৭০,০০০/-(সত্তর হাজার)টাকা দেড় বছর পূর্বে দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল হাসানকে ফেরৎ দিয়ে দেন।
এমনতাবস্থায় দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল হাসান ও তার বাবা ফারুখ হোসেন তার স্ত্রী আলমিনার কাছে চক্রবৃদ্ধিহারে আরোও ৮,০০০/-(আট হাজার)টাকা সুদ লভ্যাংশ হিসাবে দাবী করেন।নিরুপায় হয়ে গত দেড় বছরে তিন ক্ষনের মধ্যে এক ক্ষণ (আট কুড়ি)ধান দিলেও দুই ক্ষণ বকেয়া পড়ে যায়। এ নিয়ে দাদন ব্যবসায়ী নাজমুলের ডাকে সম্প্রতি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এক শালিশি বৈঠকে চলতি আলু মৌসুম শেষে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদের আট হাজার টাকাসহ বকেয়া ১৬ মণ ধান দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় গত ২০ শে নভেম্বর ২০২০ইং তারিখের রোজ শুক্রবার সাড়ে ১২টার সময়ে তার স্ত্রী আরমিনা বেগম তার বাবার বাড়ি রামজীবন থেকে দোলাপাড়া স্বামীর বাড়ি আসার প্রাক্কলে দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল হাসান ও তার বাবা ফারুখ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন রাস্তায় একাই পেয়ে আটক করে সুদের টাকা কখন ফেরত দিবে তা জানতে চায়।এসময় তার স্ত্রী গ্রামের শালিশি বৈঠকে দেওয়া মাতাব্বরদের দেওয়া নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করার স্বীকৃতি জানায়। এই কথা বলায় দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল ও তার বাবা ফারুখ মিজানুরের স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি থামকি দেন।এতে আলমিনা বেগম প্রতিবাদ করলে একলা পেয়ে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারডাং শ্লীলতাহানী ও গলায় ওড়না পেছিয়ে হত্যা চেষ্টা চালায়।এতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানেএসময় আলমিনার কাছে থাকা জমি বন্ধকির টাকা নিয়ে নাজমুল ও তার বাবা সটকে পড়েন।হাসপাতালে স্ত্রীর চিকিৎসা শেষে মিজানুর রহমান বিজ্ঞ আদালতের কাছে স্মারক নং-৬৯/২০ মূলে ২৯/১১/২০২০ ইং তারিখে চার জনকে বিবাদী করে ১১/১২/২০২০ইং তারিখে সদর কোতয়ালী থানায় মামলা হয়(যাহার মামলা নং-০৩/১১৯)।যাহা তদন্ত শেষে কোতয়ালী থানার অভিযোগ সূত্রে(যাহার অভিযোগ নং-১৫৩) ৩১/১২/২০২০ ইং তারিখে ধারা ৩৪১/৩২৩/৩০৭/৫০৬/১১৪ পেনাল কোডে বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হয়।
পরবর্তীতে সদর থানার চৌকস পুলিশ সদস্যরা ফারুখ হোসেনকে গ্রেফতার করে।পরে আলাদত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফারুখ ও ফারুখের ছেলে দাদন ব্যবসায়ী নাজমুল এলাকায় এসে বিভিন্ন ফন্দি ফিকির করে ষড়যন্ত্রমূলক ও মনগড়া সাজানো বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে তাকে ও তার মন্ডলপাড়াধীন শ্যালক আলি আজগর ও তার ছেলে মুন্নাসহ আটজনকে বিবাদী করে তার ফুফু মর্জিনা বেগমকে দিয়ে ভূয়া ভিকটিম সাজিয়ে মামলা করেন।
সেই মামলার বাদী ফারুখের বোন ও নাজমুলের ফুফু মর্জিনা বেগম দুই মাস পূর্বে তার স্বামীর বাড়ি পালিচড়া বালুয়াপাড়ায় থাকাকালীন র্দূঘটনাবসত পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গে যায়। সেই ভাঙ্গা হাত দিয়ে মেডিকেল ভর্তি করে বিভিন্ন পরীক্ষা করে সেই কাগজ দিয়ে মিথ্যা মামলা সাজান।সেই মামলায় আসামীর দেওয়া অর্থে প্রতিনিয়ত পুলিশি হয়রানীর স্বীকার হচ্ছেন বলে দাবী করছেন ভুক্তভোগীরা। আসামীরা গ্রেফতার আতংকে বাড়িতেও থাকতে পারছেনা, ক্ষেতে-খামারেও কাজ করতে পারছেনা। এমতাবস্থায় বাড়িতে থাকা গরু ছাগল নিয়ে চুরি আতংকে ভুগছে।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা হাত ভাঙ্গার নাটকের মেডিকেল পরিক্ষা করলে মূল রহস্য বের হবে বলে দাবী করেন। এজন্য মানবিক পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমারের কাছে পিবিআইসহ বিকল্প সংস্থা দিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য হস্তক্ষেপ কামনা ও পুলিশি হয়রানী থেকে বাঁচার আকুতি জানায়।
মানববন্ধনে মিথ্যা মামলায় ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান,তার স্ত্রী আলমিনা বেগম,মিজানুরের বাবা আজিজার রহমান,শ্যালক আলী আজগর সহ স্থানীয় জনসাধারণ বক্তব্য রাখেন।