নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেটে পরিবর্তনের ছোঁয়া!
হাকিকুল ইসলাম খোকন,বাপসনিউজঃ আমেরিকায় বাংলাদেশির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, বাড়ছে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের চাহিদা। নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য সুবিধা পেতে যাতে হয়রানির শিকার না হতে হয় তার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বাংলাদেশ কনস্যুলেট। ওয়াশিংটন ডিসিতে দূতাবাস থাকায় নিউইয়র্কে বসবাসরত কয়েক লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এটাই একমাত্র ভরসাস্থল। যেখানে প্রতিদিন কয়েকশ সেবা প্রার্থী ভিড় করেন তাদের পাসপোর্ট নবায়ন, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, দেশের সম্পত্তি হস্তান্তরে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়ার মতো কাজগুলোর জন্য।
বিগত সময়ে স্থান সংকুলানসহ বিভিন্ন কারণে ব্যাপক অভিযোগ ছিল কনস্যুলেট সেবা নিয়ে, পূর্বে নিউইয়র্কের পাঁচ ব্যুরোতে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কনস্যুলেট সেবার কার্যক্রম থাকলেও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে জুলাই আন্দোলনের পর ৫ই আগস্টে প্রবাসীরা কনস্যুলেট অফিসে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে দেন। অন্তর্বর্তী সরকারে প্রতি সমর্থন জানান প্রবাসীরা ।তবে স্থান সংকুলান নিয়ে বিগত সরকারের আমল থেকেই উদ্যোগ নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় ১লা অক্টোবর থেকে নতুন ঠিকানায় স্থানান্তর করা হয় বাংলাদেশ কনস্যুলেট নিউইয়ক অফিস। লং আইল্যান্ড সিটির ৩১-১০ ৩৭তম অ্যাভিনিউ, স্যুইট- ২০১ (২য়তলা) চলছে কার্যক্রম। যা পুরাতন অফিস থেকে প্রায় ৪ হাজার স্কয়ার ফিট বেশি। হয়েছে অনেক কিছুর পরিবর্তন। সেবা গ্রহীতাদের জন্য থাকছে পর্যাপ্ত জায়গা। রয়েছে অতি সন্নিকটে বাস-ট্রেন স্টেশন।
তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসছে ‘মানি অর্ডারের’ ক্ষেত্রে। অনেক সেবাগ্রহীতা মানি অর্ডার করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েন, এমনকি অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসেও এই মানি অর্ডারের কারণে সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারেন না। অনেকে পোস্ট অফিসে না করে বেশী টাকা খরচ করে মানি অর্ডার করেন, তাই সবার কথা বিবেচনা করে কনস্যুলেট অফিসে ডিজিটাল মেশিনে পেমেন্ট করার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে কার্ড দিয়েই তারা পেমেন্ট করতে পারেন। যদিও জনবল সংকটের সঙ্গে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেককে।
মিশিগান থেকে আগত দুই সেবা গ্রহীতা জানান, কাজ কর্ম রেখে বিমানের ফ্লাইটে নিউইয়র্ক এসে শুনলেন সার্ভার ডাউন। কবে ঠিক হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নাই। যদি পূর্ব নির্ধারিত সেবা গ্রহীতাদের ই-মেইলের মাধ্যমে আপডেট জানিয়ে দেয়া হতো তাহলে অনেক উপকার হতো। কিন্তু ডিজিটাল যুগে আমেরিকার মতো দেশে এসেও এই ভোগান্তি অনেক পীড়া দেয়।
সেবার জন্য কনস্যুলেটে আসা সৈয়দ রহমান জানান, বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই বাছাইয়ে দীর্ঘসময় ব্যয় হয়, এগুলো থেকে মুক্তি দরকার। প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছেন। তাই সুবিধামতো জায়গায় স্থায়ী কনস্যুলেট এবং একটা পাসপোর্ট মেশিন হলে একদিকে যেমন সেবা গ্রহীতারা উপকৃত হতো ঠিক তেমনি সরকারের প্রচুর অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি আয়ও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন।
কাউন্সেলর ও হেড অব চ্যান্সেরি ইশরাত জাহান বাপসনিউজকে জানান, বর্তমান অফিসকে বেছে নিতে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে, নিউইয়র্কে প্রচুর বাংলাদেশি থাকায় সেবাগ্রহীতাদের কথা বিবেচনা করে এ ধরনের একটা জায়গা খোঁজা হচ্ছিল। বর্তমান অফিসের জন্য মালিক পক্ষ কোনো সিকিউরিটি মানি রাখেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু নির্ধারিত স্কয়ারফিট নয়, এর বাহিরেও আমরা অনেক স্পেস পেয়েছি যা ইতিবাচক। সেবাগ্রহীতাদের জন্য কনস্যুলেট অফিসে পার্কিং, নামাজের স্থান, ওয়াশরুমের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি আগামীতে বিল্ডিংয়ের সামনে কনস্যুলেটের একটা সাইনবোর্ডও লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান।
কনসাল জেনারেল ড.নাজমুল হুদা বাপসনিউজকে জানান, পেশাগত ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট, ভিসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেবা নিতে আসেন নিউইয়র্কের ৫টি ব্যুরো থেকে। পুরাতন অফিস আর বর্তমান অফিসের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি সবাইকে সেবা দেয়ার।
পূর্বে নিউইয়র্কে পাঁচ ব্যুরোতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সেবা দেয়ার কার্যক্রম অফিসিয়াল কিছু প্রক্রিয়ার কারণে বন্ধ আছে। আগামীতে বছরে অন্তত একদিন দূরত্ব অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সেবা দেয়ার উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বাফেলোতে ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সেবা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।