ঢাকা | জানুয়ারী ১৫, ২০২৫ - ৫:৫৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

এইচএমপি ভাইরাসের কি, লক্ষণ ও প্রতিকার

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Monday, January 13, 2025 - 10:26 am
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 10 বার

স্বাস্থ্য: কভিড-১৯ মহামারির পর চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে এইচএমপি ভাইরাসের (হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস) প্রাদুর্ভাব এবং তীব্রতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এইচএমপি নতুন কোন ভাইরাস না। ডাচ বিজ্ঞানীরা এটি ২০ বছর আগে ২০০১সালে আবিষ্কার করেন। গবেষণা দেখায় যায় যে, এই ভাইরাসটি ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশনের উৎস। নতুন করে আবার এইচএমপি-এর সংক্রমণ, যা আরেক স্বাস্থ্য সংকটের উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে এক রোগীর শরীরে এইচএমপি ভাইরাস শনাক্ত করার তথ্য দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউট। এইচএমপি ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে। তাই, আতঙ্কিত না হয়ে জেনে নিন এর লক্ষণ ও প্রতিকার।

এইচএমপি ভাইরাসঃ
হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস, যা এইচএমপিভি (HMPV) নামেও পরিচিত। এটি করোনা ভাইরাসের মত শ্বাসযন্ত্রের (Respiratory) ভাইরাস। এটি নিউমোভিরিডে নামক ভাইরাসের একটি পরিবারের অন্তর্গত। রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (RSV) একই গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত।

এইচএমপি কিভাবে ছড়ায়ঃ
এইচএমপিভি করোনা ও অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতোই ছড়ায়। যার মধ্যে রয়েছে- ১. কাশি এবং হাঁচি থেকে, ২. হাত মেলানো বা স্পর্শ করলে, ৩. সংক্রমিত স্থান স্পর্শ করলে এবং মুখ, নাক বা চোখ হাত দিয়ে স্পর্শ করলে।

এইচএমপিভির উপসর্গগুলো কিঃ
এইচএমপিভির উপসর্গগুলো করোনা এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মতোই। সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট। গুরুতর ক্ষেত্রে, ভাইরাস ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা অন্যান্য ঝুঁকির কারণ থাকে।

কারা ঝুঁকিপূর্ণঃ
শ্বাসযন্ত্রের এইচএমপিভি ভাইরাস ওপরের এবং নিচের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। যে কোন মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হরে পারে, তবে যারা খুব অল্প বয়স্ক মানে শিশু বা বয়স্ক মানে বৃদ্ধদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

ইনকিউবেশোনের সময়কালঃ
এইচএমপিভি ভাইরাসের ইনকিউবেশোনের সময়কাল সাধারণত তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে হয়। তবে সংক্রমণের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো বিভিন্ন সময়কালের জন্য স্থায়ী হয়।

প্রতিরোধঃ
এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধের নিয়ম- ১. শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগসমূহ হতে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন, ২. হাঁচি ও কাশির সময় গামছা বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন, ৪. ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন, ৪. আক্রন্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন, ৫. ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোন (অন্তত ২০ সেকেন্ড), ৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ ধরবেন না, ৭. আপনি জ্বর, কাশি এবং শাসকষ্ট আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন এবং প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

বর্তমানে, এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই এবং প্রতিরোধ করার জন‍্য কোন টিকা বা ভ‍্যাকসিন নেই। যেহেতু বেশিরভাগ উপসর্গ হালকা (Mild), তাই নিজে থেকেই চলে যায়। কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায়, রোগীকে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা (Symptomatic Treatment) দেওয়া হয়। যেমন – জ্বর, ব্যথা এবং কাশির মতো উপসর্গগুলি কমাতে অ্যাসিটামিনোফেন এবং আইবুপ্রোফেন; সর্দিতে ডিকনজেস্ট্যান্ট (Decongestant); কাশ বা শ্বাসকষ্ট হলে ইনহেলার (Ventolin and Steroid Inhaler); নাকের ভিতরে চাপ কমাতে কর্টিকোস্টেরয়েড নেজাল স্প্রে (Corticosteroid Nasal Spray) ব্যবহার করুন যাকিনা রোগের উপসর্গ কমাতে সহায়তা করবে। আতঙ্কিত না হয়ে প্রতিরোধের নিয়ম মানুন ও সুস্থ থাকুন।

আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন – আমিন।

ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম
সিনিয়র সায়েন্টিষ্ট, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি