সন্তানদের উচ্চতর মেধা বিকাশে পরিবারকে আর্থিক সাপোর্টের পাশাপাশি মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন
এম আব্দুল্লাহ মাহবুব, দক্ষিণ কোরিয়া : সিলেট কানাইঘাট উপজেলার বড়দেশ গ্রামের গর্ব। সবার ভাগ্যে জোটে না, বাবা নামের এমন বটবৃক্ষ। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের এক সন্তানের কৃতিত্ব ও সাফল্য।
এই প্রথম ইউরোপের একটি দেশ ফিনল্যান্ডের স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করার ফুল স্কলারশিপ পেলেন এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানকে প্রাইভেট কলেজ থেকে শুরু করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা করানোর জন্য যে খরচটা হয়, সেটা অনেক পরিবারের পক্ষে বহন করা ব্যাপার টা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন এই পরিবারটি। তাদের নিজস্ব সখ আহ্লাদ উপেক্ষা করে এক সন্তানকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, তাকে আর্থিক ও মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়ার। অনেক সময় জমি বন্ধক রেখেও এবং মানুষের কাছে ঋন করেও সন্তানের পড়াশোনা করার খরচ চালিয়ে যেতে পিছু পা হোন নি বাবা নামের বটবৃক্ষ। সেই বাবার বাকী এক মেয়ে তার বড় ভাইকে দোয়া আর দুই ছেলে তাদের ছোট ভাইকে পড়াশোনার জন্য সাধ্য মতো আর্থিক সহযোগিতা করে গেছেন।
প্রতিটি সন্তানদের তার মেধা বিকাশের জন্য পরিবার থেকে শুধু আর্থিক সাপোর্ট করলেও হয় না, মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। সেই বাবার বাকী সন্তানরাও তাদের ছোট ভাইকে পড়াশোনার জন্য মন থেকে সার্বিক সহযোগিতা করে গেছেন তাদের সাধ্যমত। এই রিপোর্ট করতে গিয়ে তার বাবার সাথে যোগাযোগ করা হলে তার বাবা বলছেন অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত তার এই সন্তানকে নিজে পড়িয়েছেন। অনেক সময় কোন এক বিষয়ে তার সন্তানকে বোঝাতে অক্ষম হয়েছেন, তখন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে গিয়ে নিজে সমাধান করে শিখেছেন তারপর ঘরে এসে পরের দিন সন্তানকে শিখিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করেছেন । এমনিভাবে এক ভিডিও বার্তায় আবেগঘন ভাবে ছেলের সাফল্যে কামনা করে দেশবাসির কাছে দোয়া চেয়েছেন।
নাম: তাশফিকুজ্জামান
পিতা: এবাদুর রহমান (মেম্বার)
নিজ চেষ্টা, উদ্দীপনা, আত্মবিশ্বাস ও পরিবারের সার্বক সহযোগিতা বড়দেশ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে 2009 সালে এসএসসি পাশ করে সিলেট শহরের সুনাম ধন্য প্রাইভেট স্কলার্সহোম স্কুল এন্ড কলেজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে 2011 সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পরে বিএসসি(সম্মান) সিলেট লিডিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্টিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রেড: ৩.৯৭/৪.০০ নম্বর পেয়ে কৃতিত্বে সাথে উরতৃন্য হয়েছেন। ঐ সময় সর্বোচ্চ পয়েন্ট উপর ভিত্তি করে ভাইস চ্যান্সেল কতৃক একটি গোল্ড মেডেলও পেয়েছেন।
পরবর্তীতে ছেলের পড়াশোনা আগ্রহ দেখে পরিবারের সহযোগিতায় বিদেশে পড়াশোনা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ছেলেকে পাঠিয়ে দেন ফিনল্যান্ড। চলে আসেন এমএসসি করতে ইউনিভার্সিটি অব ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড। সেখান থেকে ফোটনিক্স (এপ্লাইড ফিজিক্স) মাস্টার্স থিসিস করেন গ্রেড: ৫.০০/৫.০০ মার্ক পেয়ে। এই সাফল্যের পরিপেক্ষিতে সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান পিএইচডি ডিগ্রী করতে ইউনিভার্সিটি অব অউলো, ফিনল্যান্ড।
ফিল্ড: ম্যাটেরিয়েলস ফিজিক্স তাও আবার ফুল ৪ বছরের স্কলারশিপ।
তাশফিকুজ্জামানের এই সাফল্য গ্রামবাসী গর্বিত এবং আত্মীয় স্বজনেরা তার জন্য দোয়া ও ভালবাসা সাধুবাদ জানাচ্ছেন