ঢাকা | ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪ - ৫:৩২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

অনুকরণীয় -শিক্ষনীয়  ২০২০ 

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Wednesday, December 30, 2020 - 11:47 am
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 75 বার
রোটারিয়ান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় 
আমি দুঃখ কে সুখ ভেবে বইতে পারি 
যদি তুমি পাশে থাকো 
আমি সব কিছু হাসি মুখে সইতে পারি
যদি তুমি পাশে থাকো 
একটু বাতাস যদি হয়ে যায় ঝড় 
সেই ঝড়ে ভেঙে যদি যায় বাঁধা ঘর
আবার নতুন ঘর বাঁধতে পারি 
যদি তুমি পাশে থাকো। 
বিশ্ব জুড়ে করোনা এসে পাল্টে গেছে সব 
পাল্টাতে পারেনি অনেকেই 
তাদের স্বভাব খানি 
তাইতো এখন পৃথিবী জুড়ে 
চলছে কোভিড ১৯ খেলা 
জানিনা কে যে কখন যাবো চলে 
আছে কি ভাই তার হিসাব খানা 
বিদায়ী ২০২০ বলে গেছে 
সামনে আছে আরও অনেক ঝামেলা। 
প্রিয় পাঠক আমি আমার ক্ষুদ্র জীবনে মাঝে মাঝে কিছু লেখার চেস্টা করে থাকি জানিনা আপনাদের কাছে কেমন লাগে, অনেকেই নেশা হিসাবে  নিজেকে  নানান পথেই পরিচালিত করে, আর আমি নেশা হিসাবে সাংবাদিকতা, লেখালেখি, নাটক এসব করে থাকি। মহান আল্লাহর বান্দা হিসাবে এবং তার দেয়া জীবন আপনি, আমরা অবশ্যই ভালো কাজেই পরিচালিত করতে হবে। আমি নইতো কবি, লেখক পরিচিত জন নিজেকে তবুও ভাবি পাঠকরাই আমার আপনজন।
যাক কথা না বাড়িয়ে প্রবাসের মাটিতে বসে বিদায়ী ২০২০ এ যা হারিয়েছি আর যা পেয়েছি তাই নিয়েই কিছু সুখ – দুঃখের স্মৃতি কথা তুলে ধরছি স্বল্প পরিসরে অল্প করে –
২০১৯ পৃথিবীর মানুষ আনন্দের সাথে কাজের মাধ্যমে নিজের জীবনকে অতিবাহিত করছিলো, ভালই চলছে সবাই যে যার মতো করে, এরি মাঝে হঠাৎ করেই চায়না নামক দেশ থেকে বায়না ধরে করোনা নামক যন্ত্রণার কারনে মুহুর্তেই বদলে গেলো সব, পাল্টে গেলো দুনিয়া।
কে রাজা, কে গরীব সবার চোখে মুখে আতংক, একটু বেঁচে থাকার চেস্টা, অঢেল টাকা আছে কিন্তু বাঁচার জন্য রাস্তা নাই।
বিশ্ব জুড়ে মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মরে গেল লাখো মানুষ, দেশে – প্রবাসে রাস্তার পাশে মিলেছে মরদেহ, সেকি যন্ত্রণা, আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে, বাসা, রাস্তার ধারে জঙ্গলে একটু বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি কর্তাকে ডেকেছেন দিন রাত। আজও ডাকছেন আল্লাহকে। অনেক দেশের মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলো মসজিদে।
কে মুসলিম, কে হিন্ধু, কে বৌদ্ধ, কে খৃষ্টান ধর্মালম্বীরা সকলের মাঝেই বেঁচে থাকার জন্য সেকি আকুতি।
দেশে দেশে সরকার প্রধানগন নিজেরাও চলে গেলেন ঘরে ঘরে – আর ঘোষণা দেয়া হলো দেশের সাধারণ মানুষদের বাঁচানোর জন্য সবাই ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন, একে অন্যের কাজ থেকে দুরত্ব বজায় রেখেই চলুন।
মুখে মাস্ক, হাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে, গরম পানি পান করতে, লেবু চা ইত্যাদি।
দুনিয়ার সকল মানুষ তাই পালন করেছে আজও করছে।
তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেলো  আমার চির সবুজ দেশ বাংলাদেশের মানুষের মাঝে। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশের আপামর জনসাধারণকে সচেতন হওয়ার জন্য বললেন, নিরাপদে থাকতে বললেন, সাধারণ মানুষের পাশে সরকার আছে, দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে করোনায় কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা সহ যাবতীয়  সাহায্য সহযোগিতা দেয়া হবে, তিনি করেছেনও তাই।
করোনায় কর্মহীন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। উনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে – সরকারের দেয়া ঘোষণা উপেক্ষা করে একশ্রেণির উচ্চাভলাসী ব্যবসায়ী ভাইয়ারা এক টাকার মাল ১০ টাকা দাম  নিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।
আবার দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেয়র  সাধারণ মানুষের জন্য দেয়া  সরকারের সাহায্য সহযোগিতা গুলি নিজের মনে করে খাঠের নিচে, গোয়াল ঘরে, বাগানে লুকিয়ে রেখেছে, স্থানীয় প্রশাসনের হাতে ধরা খেয়েছে, তাদের বিচারও হয়েছে।
এই লজ্জা রাখি কোথায়?  যারা করোনা কালীন সময়ে এমন কাজ করেছে সাধারণ মানুষের হোক মেরে খেয়েছে এদের কি বলা উচিৎ ভাষা খুঁজে পাইনা।
অপরদিকে বাংলাদেশ সরকারের পুলিশ বাহিনী, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ডাক্তার, নার্স, চেয়ারম্যান, মেম্বার, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন এর মানুষ গুলি নিজের জীবনের কথা, নিজের পরিবারের সাস্থ্য ঝুকির কথা না ভেবেই সাধারণ মানুষের কল্যাণে দিন রাত কাজ করেছেন, মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের প্রতি রহিলো বিনম্র শ্রদ্ধা এবং সালাম।
করোনায় কর্মহীন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে রাজনৈতিক দলের নেতারা, বিশেষ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্যরা দেশ জুড়ে মহামারী করোনার কারনে অনেক কৃষক ভাইয়ের জমির ধান কাটার লোক খুঁজে পাচ্ছিলো না। সেই সব কৃষকের জমির ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে  বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিবেদিত সদস্যরা, তাদের প্রতি সন্মান জানাই। সকলের অন্তরে জাগ্রত হোক মানবতা, আলোকিত হোক দেশ ও সমাজ সেই প্রত্যাশা করি।
আবার অনেক জেলায় কিছু রাজনৈতিক  নেতা কৃষক এর জমির কাঁচা ধান কেটে সর্বনাশ করেছে,  ঘটাও করে মোবাইলে ছবি তুলে, সেলফিবজী করতে গিয়ে রসাতলে পড়েছেন, হয়েছে সমালোচিত।
যা হারিয়েছি তা ফিরে পাওয়ার নয় আর যা দিয়েছেন আল্লাহ  তা হারিয়ে যাওয়ার নয়।
পাওয়া আর না পাওয়ার নাম জীবন।
বিশ্ব জুড়ে করোনা নামক তান্ডবের কথা কেউ ভুলে যাবেনা, কোভিড ১৯ – এ  চোখের সামনে মা, বাবা, আত্মীয় স্বজনদের  মৃত্যু হতে দেখেও কেউ কাছে যেতে পারেনি, চোখের সামনে  সন্তানের  মৃত্যু হতে দেখেও মা তার সন্তানকে  ধরতে পারেনি।
মৃত্যুর পরে লাশের পাশে যেতে পারেনি, দুর দিগন্তে দাঁড়িয়ে জানাজার নামাজ  পড়তে হয়েছে, নীরবে ঝরেছে চোখের পানি। এ কিসের আলামত দেখিয়ে যাচ্ছে করোনা ?  এর ভেতরেই আবার জন্ম হয়েছে অনেক নবাগত শিশুর। তাদের অনাগত ভবিষ্যতের কি হবে ? তা এক সৃষ্টি কর্তা বলতে পারবেন!
জন্ম আর মৃত্যুর খেলায় মেতে উঠেছে গোটা পৃথিবী একেই বলে আল্লাহর খেলা, ক্রমশ পৃথিবীটা বাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
করোনার খেলা শেষ না হতেই আবার বৃটেন থেকে  শুরু  হয়েছে ভিইউআই নামক ২০২০ সালের স্ট্রেন ভারিয়েন্ট নামক ভাইরাস।  যা করোনা থেকেও  মারাত্মক বলে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউইচও  বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েছে VUI
সবিই সৃষ্টির স্রস্টার লিলা খেলা।

যা পেয়েছি করোনা কালীন সময়ে –

২০ এপ্রিল আমি শিশু কন্যার বাবা হয়েছি যার নাম মারিয়াম আলম – প্রবাসের মাটিতে বসেই সংবাদ পেয়েছি, ভাতিজা সাফোয়ান এর জন্ম হয়েছে তার জন্য শুভ কামনা, ভাগিনার ঘরের সন্তানের নানা হয়েছি তার জন্য শুভ কামনা।

ছোট বেলায় স্কুল থেকে এসেই বই গুলি রেখেই যেই চ্যানেলটির সামনে আসন পেতে বসতাম সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ টেলিভিশন, তখন ভাবতাম জীবনে একবার যদি এই চ্যানেলের পর্দায় আমায় দেখা যেতো, ভাবনার সাথে স্বপ্নের মিল ২০০২ সালে একবার হয়েছে কাকতালীয় ভাবে, আর এইবার প্রবাসের মাটিতে বসেই প্রবাসী বাংলাদেশী একজন সাংবাদিক হিসেবে হঠাৎ করে গত ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ঢাকা বাংলাদেশ টেলিভিশনের খবর প্রতিদিন অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শুনে দারুন খুশি হয়েছি, অনুষ্ঠানের উপস্থাপক শাকিল বিন মুশতাক ভাই মোবাইলে মেসেজ দিয়ে অনলাইন জুম লাইভ মিটিংয়ে কনফার্ম করলেন, একি ভাবে সাংবাদিক হিসাবে ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ সোমবার রাতে দ্বিতীয় বারের মতো আমন্ত্রণ পেয়ে অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করি। সেই অনুষ্ঠান গুলিতে অতিথি ছিলেন সাংবাদিক মোল্লা মোহাম্মদ জালাল, দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী। বিশেষ ধন্যবাদ জানাই বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক মিজান মালিক ভাইয়ের প্রতি।

করোনায় যা হারিয়েছি –

১০ জুন ২০ আমার প্রানের প্রিয় মা ফিরোজা বেগমকে যে কস্ট ভুলবার নয় – মহান আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন, হারিয়েছি মেহের ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক প্রিয় কবিরুল ইসলাম মজুমদার স্যারকে, হারিয়েছি দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের শাহরাস্তি অফিস ইনচার্জ মইনুল ইসলাম কাজল ভাইয়ের আম্মা আমার প্রিয় খালাম্মাকে – জান্নাতবাসী করুন।

করোনা কালীন সময়ে দেশের যে যেখানেই মারে গেছেন তাদের সকলের বিদাহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি মহান আল্লাহ সবাইকে জান্নাতবাসী করুন।

এক কথায় ২০২০ সালের ইতিহাস লিখে শেষ করা যাবেনা
বিদায় বছরে আল্লাহ যা দিয়েছেন তাই পেয়েছি।

মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি আগত ২০২১ সালে পৃথিবী জুড়ে যে অস্থিরতা তা দুর করে পৃথিবীকে বাস যোগ্য করে দিন, মরার আগেই যেন আতংকে মরে না যাই। তোমার নিয়ম মাফিক ডাকেই যাবো চলে সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে, এখানে নিজের ইচ্ছায় কাহারো থাকার সাধ্য নাই। সবাইকে ২০২১নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

মনে রাখবেন দুনিয়ায় আসার কালে সবাই খালি হাতে এসেছেন আবার খালি হাতে ভিখারি হয়েই যেতে হবে – তাই অহংকার, হিংসা ভুলে যাই – সবাই সবাইকে আপন করে নেই, মানুষের কল্যাণে কাজ করুন।

তাই আসুন সবাই করোনায় শিক্ষা গ্রহন করি, সততার সাথে মানুষের কল্যাণে কাজ করি।

নতুন বছরে আলোকিত হোক সকলের জীবন।

লেখক পরিচিতি – প্রবাসী সাংবাদিক, নাট্যকার, কবি, লেখক, টেলিভিশন অভিনেতা, সাংস্কৃতিক সংগঠক।