জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়ম শেখালেন কুলাউড়ার ইউএনও
সেলিম আহমেদ,সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট: আমাদের জাতীয় পতাকা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক এবং আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রের পরিচয়। সেই সাথে আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের স্মারক। তাই একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে জাতীয় পতাকাকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের দায়িত্ব।
আসুন জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়মাবলি জেনে নেই। শ্রদ্ধা, সম্মান ও মর্যাদার সাথে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করি। জেনে, না-জেনে, লোক দেখানো দেশপ্রেম, অতি উচ্ছাসে, কিংবা যেনতেনভাবে জাতীয় পতাকা ব্যবহার থেকে বিরত থাকি এবং জাতীয় পতাকার অবমাননা রোধ করি।
বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানাতে কুলাউড়া শহরে একটি সচেতনতামূলক অভিযান করে লিফলেট বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী। ১৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পৌর শহরের দক্ষিণবাজার এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন, উপজেলা স্কাউটস’র সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমদসহ কুলাউড়া মুক্ত স্কাউট’সর সদস্যরা।
তাঁদের রাস্তার দুই পাশের বিভিন্ন দোকানে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ী ছাড়াও গাড়ীর চালক ও পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরন করা হয়। দেখা গেল, ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী সবাইকে সঠিকভাবে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়মাবলী পড়ে পতাকা টানানোর জন্য অনুরোধ করছেন।
উপজেলা প্রশাসনের এই লিফলেট বিতরণের সময় কথা হলো কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। বেশির ভাগই জানালেন, তাঁরা বিষয়টি স্পষ্ট করে জানতেন না। সুলতান আহমদ নামের এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম যে হয়তো জরিমানা করবে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট অত্যন্ত সুন্দর করে পতাকা উত্তোলনের নিয়মটি বুঝিয়ে দিলেন।
ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, অনেক সময় দেখা যায় ব্যবসায়ীরা সঠিক নিয়মে পতাকার ব্যবহার করছেন না। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেই উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ। কুলাউড়া শহর ছাড়াও কুলাউড়ার সর্ববৃহৎ রবিরবাজার, ব্রাহ্মনবাজারসহ বড় বড় বাজারে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
আসুন জেনে নেই জাতীয় পতাকার সঠিক মাপ এবং ব্যবহারের নিয়মঃ
১. বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদর্শ মাপ ১০:৬। সঠিক মাপ ও সঠিক রং এর জাতীয় পতাকা তৈরি করে সোজা দন্ডের চূড়ায় উড়াতে হবে।
২. পতাকা টানানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে এটি এমন জায়গায় টানানো না হয় যাতে এর মান অক্ষুণ্ণ হয়।
৩. পতাকা দিয়ে মোটরযান, রেলগাড়ি অথবা নৌযানের খোল, সম্মুখভাগ অথবা পেছনের অংশ কোনো অবস্থাতেই ঢেকে দেয়া যাবে না
৪. যেসব ক্ষেত্রে কেবলমাত্র দুটি পতাকা অথবা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ ভবনের ডানদিকে উত্তোলন করা হবে।
৫. বাংলাদেশের পতাকা’র উপরে অন্য কোনো পতাকা বা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।
৬. যে ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশের সহিত ‘বাংলাদেশের পতাকা’ একত্রে উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ প্রথমে উত্তোলন করতে হবে এবং নামানোর সময় সবশেষে নামাতে হবে।
৭. যে ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অর্ধনমিত থাকে, সেক্ষেত্রে প্রথমে সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উত্তোলন করা হবে এবং অতঃপর নামিয়ে অর্ধনমিত অবস্থায় আনা হবে। ওই দিবসে পতাকা নামানোর সময় পুনরায় উপরিভাগ পর্যন্ত উত্তোলন করা হবে, অতঃপর নামাতে হবে।
৮. ‘পতাকা’ কোনো ব্যক্তি বা জড় বস্তুর দিকে নিম্নমুখী করা যাবে না।
৯. তাকা’ কখনই তার নিচের কোনো বস্তু যেমন- পানি বা কোনো পণ্যদ্রব্য স্পর্শ করবে না।
১০. ‘পতাকা’ কখনই আনুভূমিকভাবে বা সমতলে বহন করা যাবে না, সর্বদাই ঊর্ধ্বে এবং মুক্তভাবে থাকবে।
১১. পতাকাকে কখনও পদদলিত করা যাবে না।
১২. কোনো কিছু গ্রহণ, ধারণ, বহন বা বিলি করার জন্য ‘পতাকা’ ব্যবহার করা যাবে না।
১৩. ‘পতাকা’ দ্রুত উত্তোলন করতে হবে এবং সসম্মানের সঙ্গে নামাতে হবে।
১৪. পতাকার অবস্থা যদি এমন হয় যে, তা আর ব্যবহার করা যাবে না, নষ্ট হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে, বিশেষ করে সমাধিস্থ করে নিষ্পত্তি করতে হবে।