ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ৮:২১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

ইতিহাসের ‘খলনায়ক’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিহাস রচনায় দ্বিতীয়বার অভিশংসিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Friday, January 15, 2021 - 8:41 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 130 বার

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা অভিশংসন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল কয়েক দিন আগেই। এবার প্রতিনিধি পরিষদের কয়েকজন রিপাবলিকান সদস্যও যে তাদের নেতাকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন, তাও জানা গিয়েছিল আগেভাগেই। তবে সবার কৌতূহল ছিল ট্রাম্পকে কত ভোটে অভিশংসন করা হয় এবং কতজন রিপাবলিকান সদস্য তার বিপক্ষে ভোট দেন।

সব জল্পনার অবসান ঘটে বুধবার গভীর রাতে। বাংলাদেশ সময় রাত ৩টার দিকে অভিশংসন প্রস্তাবে ভোট শুরু হয়। ফলাফলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত ৪৩৫ সদস্যের প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটি ২৩২-১৯৭ ভোটে পাস হয় (চারজন ভোটদানে বিরত ছিলেন)। ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস বিদ্রোহে উস্কানি’ দেওয়ার জন্য দায়ী করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রস্তাবটি পাস হয়। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে লিজ চেনিসহ ১০ জন রিপাবলিকান নেতা ভোট দেন প্রস্তাবের পক্ষে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের লজ্জা বরণ করলেন। তবে শুধু সংসদের নিম্নকক্ষে প্রস্তাবটি পাস হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হচ্ছে না। সিনেটে প্রস্তাবটি পাস না হলে তিনি স্বপদে বহাল থাকতে পারবেন। ট্রাম্পের মেয়াদের বাকি আছে এক সপ্তাহেরও কম সময়। এ সময় প্রস্তাবটি সিনেটে তোলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সিনেট মেজরিটি নেতা মিচ ম্যাককনেল।         প্রস্তাবটি সিনেটে উঠছে ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর। তখন এটি পাস হলে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার আর প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার সুযোগ পাবেন না। সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো সুবিধাও হয়তো পাবেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে বিল ক্লিনটন ও অ্যান্ড্রু জনসনকে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন করা হলেও সিনেটে তারা খালাস পান। ১০০ সদস্যের সিনেটে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হতে দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৭ জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সিনেটে প্রস্তাবটি পাস হতে ১৭ রিপাবলিকান সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে। তবে এবার ২০ জনের মতো রিপাবলিকান সিনেটর তাকে দণ্ড দেওয়ার পক্ষে সমর্থন দিতে পারেন। এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রস্তাব উঠছে সিনেটে। প্রস্তাবটি পাস হলে তিনিই হবেন কোনো মার্কিন সিনেটে দণ্ডিত প্রথম প্রেসিডেন্ট।

ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করায় ২০১৯ সালে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হয়। তখন কয়েক সপ্তাহের উত্তপ্ত শুনানি শেষে প্রস্তাবটি পাস হয়। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে তাকে খালাস দেওয়া হয়। এবার কার্যত এক দিনেই নজিরবিহীনভাবে প্রস্তাবটি পাস হলো।

প্রস্তাবটি পাসের পর প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘আজ দ্বিদলীয় পন্থায় প্রতিনিধি পরিষদ দেখিয়ে দিল যে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও নন।’

গত ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে জো বাইডেনের বিজয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার দিন বিক্ষুব্ধ ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনে নজিরবিহীন হামলা চালায়। তাতে নিহত হন পাঁচজন। ওই হামলার ঠিক আগেই ট্রাম্প তার সমর্থকদের উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে উগ্রতার প্ররোচনা ছিল বলে সব মহল থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতাও এর সমালোচনায় মুখর হন।

সাম্প্রতিক হামলার অভিজ্ঞতায় ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে ক্যাপিটল ভবনে শুরু হয় প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশন; ভবনের ভেতরে-বাইরে গিজগিজ করছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের প্রায় দেড়শ বছর পর সশস্ত্র ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা এই প্রথম কংগ্রেস ভবনের ভেতরে অবস্থান নেন রণপ্রস্তুতি নিয়ে। ভোটাভুটির আগে কয়েক ঘণ্টা উত্তপ্ত বিতর্ক চলে প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশনে।

ভোটের আগে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘ইতিহাসকে এড়িয়ে যেতে আমরা পারি না। আমরা দেখেছি, প্রেসিডেন্ট দাঙ্গায়, সশস্ত্র বিদ্রোহে উস্কানি দিয়েছেন। তাকে (ট্রাম্প) যেতেই হবে। তিনি জাতির জন্য স্পষ্ট ও জাজ্বল্যমান এক হুমকি।’

অভিশংসন শুনানিতে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারাও ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেওয়া রিপাবলিকান সদস্য অ্যাডাম কিনজিঙ্গার শুনানিতে বলেন, ‘আজ আমি শান্তি পাচ্ছি যে, আমার ভোটটি যথাযথভাবে দেওয়া হলো। ইতিহাস এভাবেই আমার ভোটকে বিচার করবে।’ তবে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থি বলেন, ট্রাম্প ভুল করেছেন। ক্যাপিটলে হামলার দায় তিনি এড়াতে পারেন না। এ জন্য তার ভর্ৎসনা করা উচিত। তবে তড়িঘড়ি অভিশংসন করা হলে তাতে দেশে বিভাজন আরও বাড়বে।

কবে সিনেটে প্রস্তাবটি উঠবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে তা যে ২০ জানুয়ারির আগে হচ্ছে না, তা জানিয়ে দিয়েছেন সিনেটে রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককনেল। অভিশংসন নিয়ে সিনেটের জরুরি অধিবেশন ডাকার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন তিনি। তার মানে দাঁড়ায়, বিদায়ের আগে ট্রাম্পের পদ হারানোর সম্ভাবনা নেই। তবে ম্যাককনেল ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে মত দিয়েছেন। ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক ম্যাককনেল বলেছেন, তিনি সিনেটে শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এবার তিনি ট্রাম্পের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেননি। প্রভাবশালী রিপাবলিকান নেতা ম্যাককনেল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে প্রস্তাবটি পাস হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হবে। পরবর্তী সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

আগামী বুধবার শপথ নিতে যাওয়া জো বাইডেন ট্রাম্পের অভিশংসনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, সিনেট ট্রাম্পকে অভিশংসনের পাশাপাশি তাদের অন্যান্য জাতীয় দায়িত্বও পালন করবে বলে তিনি আশাবাদী। এর মধ্যে রয়েছে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ অনুমোদন, অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ও করোনার সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ। ট্রাম্প ভোটাভুটির আগে-পরে হোয়াইট হাউসেই অবস্থান করছিলেন। এক বিবৃতিতে তিনি তার সমর্থকদের সহিংসতার আশ্রয় না নেওয়ার আহ্বান জানান। তবে তিনি অভিশংসনের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেছেন।