ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ১২:৪৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

বিশ্ব দর্শন দিবসের ভাবনা

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Friday, January 15, 2021 - 8:45 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 194 বার

বিশ্ব দর্শন দিবসের ভাবনা: কিছু মৌলিক প্রশ্নের সন্ধানে-গত দেড় দশক ধরে বিশ্বের দেশে দেশে ইউনেস্কোর ঘোষণা ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দর্শন দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির লক্ষ্য দৈনন্দিন জীবনে দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা, ব্যবহারিক জীবনের সাথে দর্শনকে সম্পৃক্ত করা। এক কথায় জীবনঘনিষ্ঠ দর্শনচর্চা করা।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে ইউনেস্কোর ঘোষণার আগে কি জীবনঘনিষ্ঠ দর্শনচর্চা ছিল না অথবা ব্যবহারিক জীবনে কি দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা নির্দিষ্ট করা যায়নি? যদি তাই হয় তাহলে ইউনেস্কোর ঘোষণা যথার্থ ও প্রয়োজনীয়। যদি তা না হয় তাহলে প্রশ্ন জাগে নতুন করে আবার ইউনেস্কো কেন দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভাবছে, দিবস পালনের ওপর জোর দিচ্ছে। এর একটি কারণ সম্ভবত দর্শনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দর্শন চর্চাকে উৎসাহিত করা। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থা তরুণ প্রজন্মকে দর্শনচর্চায় উদ্বুদ্ধ করা, জীবনকে অর্থবহ করা, জীবনবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা। একথা সত্য যে দর্শন দিবস পালনের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও জ্ঞানের আদি বিষয় হিসেবে দর্শনের প্রচার ও প্রসার ঘটবে, দার্শনিক ভাবনার খোরাক জোগাবে।

যে-কোনো দিবস পালনের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিকতা থাকে, অনেক ক্ষেত্রে একটা বার্তা থাকে। বিশ্ব দর্শন দিবসের উদ্দেশ্যের মধ্যেও তা রয়েছে। বিশেষ করে প্রতি বছর এর একটা মূল থিম বা প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে, যা থেকে একটা বার্তা নিঃসৃত হয়। তবে এ বার্তা কতটা ফলপ্রসূ হয় এবং সে ব্যাপারে ইউনেস্কো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিনা, অথবা এ ব্যাপারে ইউনেস্কোর কোনো দায়বদ্ধতা আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। গত দেড় দশকে দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা ছাড়া ইউনেস্কোর অন্য কোনো ভূমিকা লক্ষ করা যায়নি। দর্শন দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া ইউনেস্কোর কোনো দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে হয় নি। দর্শনের বার্তা বিশ্ব ব্যাপী মানুষের কাছে পৌঁছেছে কিনা, মানুষের চেতনার জগতকে তা নাড়াচাড়া দিতে পেরেছে কিনা, মানুষকে তার স্বাধীনতা ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করছে কিনা, বৃহৎ শক্তির দেশসমূহের দুর্বল দেশসমূহের ওপর (দুর্বলের ওপর সবলের) আধিপত্য, খবরদারি, জবরদস্তি ও অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনা সৃষ্টি করতে পেরেছে কিনা- এসব তদারকি করার অথবা এসবের হিসেব কষার ব্যাপার ইউনেস্কোর কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় নি। তবে এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই, এটাই স্বাভাবিক। ঘোষণা এবং দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। ইউনেস্কোর উদ্দেশ্য যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দর্শনচর্চাকে উৎসাহিত করা হয়, সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন জাগে- এ ব্যাপারে বৈশ্বিক এ প্রতিষ্ঠান কি ভূমিকা পালন করেছে। সংশয় জাগে- প্রতিষ্ঠানটি বৃহৎ শক্তির অধীন কিনা। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দর্শনচর্চা কেবল প্রতিষ্ঠানের বোদ্ধাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রিয়াকলাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এর বাইরে তা তেমন কোনো আবেদন সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে হয় না। মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি, যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা এবং সর্বোপরি চেতনার জাগরণের ক্ষেত্রে দর্শনের বার্তা প্রতিষ্ঠানের বাইরে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে না। তবে এটা স্বীকার করতেই হয় যে দর্শন দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইউনেস্কো পেশাদার দার্শনিক (দর্শনের শিক্ষক-শিক্ষর্থী) ও দর্শনানুরাগীদের মধ্যে বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত বার্তা বা মর্মবাণীটি পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। কাজেই ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ না চাপিয়ে, ইউনেস্কোর সীমাবদ্ধতার ওপর দোষ না চাপিয়ে আমরা যারা প্রাতিষ্ঠানিক দর্শনচর্চায় নিয়োজিত আছি তারা দায়িত্বটা পালন করি, দায়বদ্ধতার দায়টা কাঁধে নেই।

ব্যবহারিক জীবনে দর্শনের শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ, দর্শনের শিক্ষার আলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর সর্বজনীনতা তুলে ধরার লক্ষ্যে ইউনেস্কো দর্শনের প্রায়োগিক দিকের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ব দর্শন দিবস পালনের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু এভাবে দিন-তারিখ ঠিক করে, প্রতি বছর একটা মূল বক্তব্য বিষয় নির্ধারণ করে আনুষ্ঠানিকতাই প্রধান হয়ে উঠে। দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা যত গুরুত্ব পায়, দিবসের অন্তর্নিহিত মর্মার্থ ততটা গুরুত্ব পায় না। তবে আনুষ্ঠানিকতার মূল্যকেও অস্বীকার করা যায় না। বিষয়ের প্রচার-প্রসার ও মূল বার্তা আনুষ্ঠানিকতা উর্ধ্বে উঠে গেলে, মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে আনুষ্ঠানিকতার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক দর্শনচর্চার মাধ্যমে দর্শনের কেতাবি জ্ঞান অর্জন করা যাবে, দার্শনিকদের তত্ত্ব মুখস্ত অথবা আত্মস্থ করে পান্ডিত্য লাভ করা যাবে; কিন্তু কেবল পাঠ আত্মস্থ করে দর্শনমনস্ক হওয়া অথবা দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলে তা দিয়ে মানুষ ও সমাজকে আলোকিত করা যায় না, সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর ঘটানো যায় না। এজন্য প্রয়োজন স্বতঃস্ফূর্ত জীবন-জিজ্ঞাসা; দার্শনিকরা জগত ও জীবন সম্পর্কে যে মৌলিক ও ধ্রুপদী প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেছেন সেগুলো নিজের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের মৌলিক সমস্যা ও প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধান করা এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করা। সমস্যা ও প্রশ্নগুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ উত্তর অনুসন্ধান করা হলো দর্শনের তাত্ত্বিক দিক, অন্যদিকে দৈনন্দিন বা ব্যবহারিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করে পরিবর্তনের দিকনির্দেশনা প্রদান করা এর প্রায়োগিক দিক। ইউনেস্কো দর্শনের প্রায়োগিক দিকটার ওপরই জোর দিয়েছে, তাত্ত্বিক অনুসন্ধানের দিকটা সেক্ষেত্রে গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু রোগীর রোগ নির্ণয় করা ছাড়া যেমন রোগ নিরাময় করা যায় না, ঠিক তেমনি সমস্যার প্রকৃতি উদঘাটন করা ছাড়া সমস্যা নিরসনের পথ নির্দেশ করা যায় না। অর্থাৎ তত্ত্ব ছাড়া প্রয়োগ সম্ভব নয়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে প্রয়োগের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। বরং বিপরীত দিকে প্রয়োগের মাধ্যমেই তত্ত্বের যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত হয়। তত্ত্ব ও প্রয়োগ একই বাস্তবতার দুই দিক। কাজেই এ দুয়ের সমন্বয়ের মধ্যেই দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা নিহিত।

জীবনঘনিষ্ঠ দর্শনের কথা, দৈনন্দিন জীবনে দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে ইউনেস্কোর ঘোষণা ও দিক-নির্দেশনা নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রাচীনকালে সক্রেটিস থেকে শুরু করে আধুনিকভালে মার্কস পর্যন্ত বড়ো বড়ো দার্শনিকেরা তাঁদের চিন্তা, চর্চা ও কর্মে আমাদের জন্য এমন দিকনিদের্শনা রেখে গেছেন। ইউনেস্কো কেবল নতুন করে আবার আমাদেরকে সেটিই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। দর্শনের আদি গুরু সক্রেটিস উত্তম জীবন ও উত্তম সমাজের জন্য ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ দেখিয়েছেন, প্লেটো ও অ্যারিস্টটল সেই পথে হেঁটেছেন- রচনা করেছেন মহাগ্রন্থ রিপাবলিক ও পলিটিক্স, আজও যা প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। মার্কস শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রমজীবী মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন পরিবর্তনের দর্শন, যার মাধ্যমে তিনি সমগ্র মানব সমাজের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। ফয়েরবাখ সম্বন্ধে থিসিসের ১১ নম্বর থিসিসে জগত পরিবর্তনের দিকনির্দেশনা দিয়ে তিনি প্রায়োগিক দর্শনের ভিত্তিভূমি রচনা করেছেন। যে দর্শন বন্টনের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি বিজ্ঞানভিত্তিক মানবিক সমাজের পথ দেখায়। ইউনেস্কোর ঘোষণায় দার্শনিকদের এসব মতেরই প্রতিফলন ঘটেছে। ইউনেস্কোর মহাপরিচালক Adrey Azouloy দর্শনকে ‘পরিবর্তন সম্পর্কিত চিন্তার মূল্যবান হাতিয়ার’ বলে উল্লেখ করেছেন। ইউনেস্কোর ঘোষণায় বিশ্ব দর্শন দিবস পালনের নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যসমূহের কথা বলা হয়েছে:

১. দর্শনের প্রতি জাতীয়, উপআঞ্চলিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির পুনরুজ্জীবন;

২. সাম্প্রতিককালের প্রধান প্রসঙ্গগুলো সম্পর্কে দার্শনিক বিশ্লেষণ ও গবেষণাকে উৎসাহিত করা, যাতে করে বর্তমানে মানবতার সামনে উপস্থিত চ্যালেঞ্জগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যায়;

৩. দর্শনের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং বিশ্বায়ন অথবা আধুনিকতায় প্রবেশের ফলস্বরূপ বহু সমাজে উদ্ভূত পছন্দসমূহকে এর বিচার বিশ্লেষণের আওতায় আনা;

৪. দর্শন শিক্ষায় প্রবেশের অসম দিকের ওপর গুরুত্বসহ বিশ্বব্যাপী এর বর্তমান অবস্থা নিরুপণ করা;

৫. ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দর্শন শিক্ষার সর্বজনীনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা।

ইউনেস্কোর এসব উদ্দেশ্যের মূল বার্তা প্রধানত প্রয়োগধর্মী বা ব্যবহারিক হলেও এতে দর্শনের তাত্ত্বিক অনুসন্ধানকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে দর্শন শিক্ষার গুরুত্ব ও ব্যবহারিক সমস্যাগুলোর দার্শনিক গবেষণা ও বিচার-বিশ্লেষণের শুধুমাত্র এর ব্যবহারিক দিকের মধ্যেই নিহিত নয়। তাত্ত্বিক অনুসন্ধান এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, মৌলিক প্রশ্নগুলোর তাত্ত্বিক অনুসন্ধান তথা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও দিকনির্দেশনা ছাড়া ব্যবহারিক জীবন অর্থপূর্ণ হতে পারে না। ইউনেস্কো দর্শন শিক্ষার সর্বজনীনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। এর কারণ বোধ হয় এটা যে জীবন-জিজ্ঞাসার যৌক্তিক অনুসন্ধান এবং জীবন সম্পর্কে যথার্থ বোধ গড়ে তোলার জন্য দর্শনের পাঠ ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। জীবনের অর্থ বুঝতে হলে, জীবনকে অর্থপূর্ণ করতে হলে জীবন সম্পর্কে যথার্থ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা প্রয়োজন।

জীবন ও জগতকে কেন্দ্র করে যেখানে দর্শনের উদ্ভব সেখানে দর্শনকে প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত করা তথা জীবনঘনিষ্ঠ দর্শনচর্চার ওপর কেন আজ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জীবন ও জগতকে কেন্দ্র করে দর্শনের উৎপত্তি হলেও জীবন ও জগতের সাধারণ ও মৌলিক সমস্যাগুলোর যৌক্তিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে দর্শন পৌঁছে যায় তত্ত্বের গভীরে। যে কারণে এর তত্ত্বটাই প্রধান বলে প্রতীয়মান হয় এবং একে প্রধানত তত্ত্বানুসন্ধানের বিষয় বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু তাই বলে দর্শনকে জীবন-বিচ্ছিন্ন বলা যায় না। কারণ, তাহলে জীবনের অর্থ উদঘাটন করা যাবে না; জীবনকে অর্থপূর্ণ করতে হলে, জীবনের অর্থ খুঁজতে হলে দার্শনিক বোঝাপড়া বা তত্ত্বানুসন্ধান প্রয়োজন। জীবন একটি গতির নাম, একটি সৃষ্টির নাম। জীবনের এই গতিশীলতা ও সৃষ্টিশীলতাকে যৌক্তিক ভিত্তি প্রদান করে দর্শন জীবনকে অর্থবহ ও মূল্যবান করে তোলে। জীবনের অর্থ ও মূল্য এবং জীবন সম্পর্কিত আদর্শ, উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধ জীবনের বাইরে অন্য কিছু দ্বারা নির্ধারিত হয় না। অর্থাৎ জীবনের স্বতঃমূল্য রয়েছে, দার্শনিক অনুসন্ধান ছাড়া যার স্বরূপ উদঘাটন করা যায় না। সেই দিক থেকে বলা যায় দর্শন ব্যবহারিক জীবনের তাত্ত্বিক অনুসন্ধান। ব্যবহারিক ক্রিয়াকলাপ ছাড়া যেমন তত্ত্বের যথার্থতা নিরুপণ করা যায় না, ঠিক তেমনি তাত্ত্বিক অনুসন্ধান ছাড়াও ব্যবহারিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করা যায় না। দর্শন জীবনকেন্দ্রিক, জীবনের ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক উভয় দিকই দর্শনের আওতাভুক্ত। জীবনের যেমন বৈষয়িক প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি জীবনকে উপলব্ধি করা বা বোঝাপড়ারও প্রয়োজন রয়েছে, যেখানে জীবনের উদ্দেশ্য, আদর্শ ও মূল্যবোধ নিহিত। অর্থ-সম্পদ বা মুনাফা দিয়ে জীবনের বৈষয়িক প্রয়োজন মেটানো যায়, কিন্তু আদর্শ ও মূল্যবোধ নিরুপণ করা যায় না, জীবনে আদর্শের উপলব্ধি ঘটে না। কেবলমাত্র দর্শনই এ কাজটি করতে পারে।

লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, প্রফেসর ড. হারুন রশীদ -দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।