ঢাকা | ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪ - ২:০৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

নকশা বহির্ভূত প্লট বরাদ্দের কারণ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Tuesday, January 19, 2021 - 10:33 am
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 87 বার

মোঃ শহিদুল ইসলাম (শহিদ), সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম:- বন্দর নগরীর শেরশাহ এলাকায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি এলাকা। এখানেই নকশা বহির্ভূত প্লট বরাদ্দের অভিযোগে চার সাংবাদিকসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। 

‘জালিয়াতির’ মাধ্যমে মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য নির্ধারিত জমিতে প্লট তৈরি করে বরাদ্দসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় চার সাংবাদিক ও তিনজনের স্ত্রী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন।

সোমবার চট্টগ্রামের বিশেষ জজ ও মহানগর দায়রা জজ শেখ আসফাকুর রহমানের আদালতে তারা আত্মসমর্পণ করেন।

পরে শুনানি শেষে আদালত মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া পর্যন্ত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ গণমাধ্যমকর্মী কে বলেন “উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেছিল আসামিরা। উচ্চ আদালত তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে বলেন।

“বয়স এবং পেশা বিবেচনায় তাদের আবেদন বিবেচনা করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। আজ আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তাদের জামিন দেন।”

চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুব উল আলম, সাবেক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক কোষাধ্যক্ষ শহীদ উল আলম, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নির্মল চন্দ্র দাশ, তার স্ত্রী তপতী দাশ, শহীদ উল আলমের স্ত্রী তসলিমা খানম, নিজাম উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হোসনে আরা এবং প্লট ক্রেতা মো. সেলিম ও হুমায়েরা ওয়াদুদকে আসামি করে গত ২৫ নভেম্বর এই মামলা করে দুদক।

মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য বরাদ্দ জমিতে প্লট তৈরি করে স্ত্রীদের নামে বরাদ্দ, মিথ্যা নকশা প্রণয়ন, প্লট হস্তান্তর ফি সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির বরাবর নগরীর বায়েজিদ থানার শেরশাহ এলাকায় সরকারি বরাদ্দকৃত জমিতে এই প্লট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

আদালতের নির্দেশে তদন্ত শেষে দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুসন্ধান ও তদন্ত-৫ এর উপ-পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক গত ২৪ নভেম্বর মামলা করার নির্দেশ দেন। পরদিন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মো. আবু সাঈদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

আসামিদের মধ্যে প্লট ক্রেতা মো. সেলিম ও হুমায়েরা ওয়াদুদ বাদে বাকি সাতজন হাই কোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

১৪ ডিসেম্বর দেওয়া এক আদেশে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ তাদের চট্টগ্রামের বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন।

জাল-জালিয়াতি করে প্লট: জামিন মিলেনি ৪ সাংবাদিকসহ সাত আসামির

প্লট জালিয়াতি: চট্টগ্রামে ৪ সাংবাদিকসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা

সাংবাদিকদের আবাসন সমস্যা নিরসনের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৮২ সালে সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসন বায়েজিদ থানার ষোলশহর মৌজার ওই ১৬ একর জমি সোসাইটিকে লিজ দেয়।

ভূমি উন্নয়ন ও প্লট সৃজন শেষে সোসাইটির সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯৯২ সালের ১৬ জুন ১০৯টি প্লট উল্লেখ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে নকশা অনুমোদনের আবেদন করা হয়।

অনুমোদনের পর সিডিএ সোসাইটির সে সময়ের সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমেদের কাছে নকশা হস্তান্তর করে। এরপর সোসাইটির বার্ষিক সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ১০৮টি প্লট সমিতির সদস্যের বরাদ্দ দেওয়া হয়। একটি প্লট বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির কার্যক্রম তদারকির জন্য রাখা হয়।

এর মধ্যে সাংবাদিক মাহবুব উল আলম, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, শহীদ উল আলম ও নির্মল চন্দ্র দাশ প্রত্যেকে পাঁচ কাঠার একটি করে প্লট বরাদ্দ ও রেজিস্ট্রি পান।

এরপর ১৯৯৪-৯৭ সাল মেয়াদে সোসাইটির চেয়ারম্যান পদে মাহবুব উল আলম, সম্পাদক পদে নিজাম উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ পদে শহীদ উল আলম এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে নির্মল চন্দ্র দাশ নির্বাচিত হন।

মামলায় বলা হয়, তাদের মেয়াদে সোসাইটির অনুমোদিত নকশায় মসজিদ ও কবরস্থানসহ পার্শ্ববর্তী সরকারি জমি দখল দেখিয়ে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে বানোয়াট’ নকশা প্রণয়ন করা হয় যাতে সিডিএর কোনো অনুমোদন নেই।

পরে নকশা বহির্ভূত তিনটি প্লট তিন সাংবাদিক শহীদ উল আলম, নির্মল চন্দ্র দাশ ও নিজাম উদ্দিন আহমেদের স্ত্রীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। যদিও তারা সোসাইটির সদস্য নন।

নির্মল দাশের স্ত্রী তপতী দাশ তার নামে বরাদ্দ প্লটটি মো. সেলিমের কাছে এবং শহীদ উল আলমের স্ত্রী তাসলিমা খানম তার নামে বরাদ্দ প্লট হুমায়েরা ওয়াদুদের কাছে বিক্রি করে দেন।

বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া সম্পত্তি হস্তান্তরে জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে এবং বাজার মূল্যের ২৫ শতাংশ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। কিন্তু ওই দুইজন প্লট বিক্রি করলেও সরকারি কোষাগারে কোনো টাকা জমা না দিয়ে তা আত্মসাৎ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

পরে সদস্য নন এমন তিনজনকে প্লট বরাদ্দের বিষয়টি জানাজানি হলে সোসাইটির অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জেলা সমবায় কার্যালয়ও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পায়।

২০০৪ সালের ৯ ডিসেম্বর জেলা সমবায় অফিসার শুনানি শেষে দেওয়া এক আদেশে তিনটি প্লটের বরাদ্দ অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করলেও ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর তা খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট।

এরপর ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সোসাইটির বার্ষিক সাধারণ সভায় প্লট জালিয়াতির ঘটনায় মামলা ও পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়।

এর প্রেক্ষিতে পরের বছর চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে সোসাইটির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। ওই মামলাটি দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।