২৬ শে অপরূপা
রোটারিয়ান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়
অপরূপার জন্মদিনে গাইবো মোরা গান
সেই গানেতে উঠবে মেতে সকল নতুন প্রান
আয়রে নবীন, আয়রে প্রবীন
আয়রে তোরা আয়
এই আকাশে উড়বো সবাই
নেইকো বাধা আজ
বাবা, মায়ের কথা মতো অপরূপায় যাই
সুস্থ ধারার সংস্কৃতি বিকাশে
কাজ করি সবাই
বাবা, মায়ের কথা মতো স্কুলেতে যাই
জীবন গোড়ার পাঠশালাতে চলছি সবাই তাই
লেখা পড়া শিখে মোরা বড় হতে চাই
গরীব দুখির সহায় হবো
হবো তাদের ভাই।
অপরূপার জন্মদিনে গাইবো মোরা গান
সেই গানেতে উঠবে মেতে সকল নতুন প্রান।
প্রিয় পাঠক স্ব রচিত কিছু স্মৃতি কথা দিয়েই শুরু করছি লেখা, বরাবরি বলছি আমি নইতো কবি, নয়তো কোন লেখক, আমি অতি ক্ষুদ্র, আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। প্রাইমারি স্কুল জীবন থেকেই নেশা হিসাবেই কিছু লেখার চেস্টা অব্যাহত রেখেছি।
আমার আজকের লেখার শিরোনাম ২৬ শে অপরূপা
চাঁদপুর শাহরাস্তি উপজেলায় যখন কোন ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠন বা চর্চা কেন্দ্র ছিলোনা তখন ১৯৯৬ সালের ২০ জানুয়ারি মাত্র দুজন বন্ধু মিলে খোলা আকাশের নিচে বসে আলোচনা সাপেক্ষে শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নামক সংগঠনের নাম করন করি।
অপরূপার অর্থ হচ্ছে নানান রুপে রূপায়িত – যেমন এই সংগঠনে হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখ -সহ নাটকের মাধ্যমে সকল কিছু তুলে ধরা হবে।
শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক ও নাট্যকার রোটারিয়ান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ভুইয়া মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সুমন।
তিনি দীর্ঘদিন আমার সাথে ছিলেন আজ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তি হওয়ার কারনে দুরে আছেন, মাঝে মাঝে খবর নেন।
একি সাথে নাটক হোক অসুন্দরের বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু করি সাংস্কৃতিক চর্চা।
আমাদের সংগঠনের প্রথম নাটক হচ্ছে ভালোবাসলেই পাওয়া যায়না – রচনা ও নাট্য নির্দেশক আমিই ছিলাম।
অভিনয়ে – মাসুদ, সুমন, এমরান, সোহাগ, নকুল, শাহেদা।
এটি ছিলো গায়ে হুলুদের অনুষ্ঠানে। গ্রাম অঞ্চলে থিয়েটার বা নাট্যচর্চা খুব কঠিন কাজ তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম, কিছু মানুষ এমন ভাবে সমালোচনা করতেন নাটক হারাম। আমার মরহুম পিতা আবদুল খালেক পাটোয়ারী কাছে শুধু নালিশ দিতেন, আপনার ছেলে এসব কি করছেন, আমার বাবা বলতেন ছেলে আমার বাজে নেশা না করে নাটকের সাংস্কৃতিক চর্চা করছে এতে সমস্যা কোথায়? । সে অনেক ইতিহাস।
স্বল্প পরিসরে শুধু শাহরাস্তির জন্মদিনে সংগঠনের স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো তুলে ধরছি বন্ধুরা। সংগঠন এর সদস্য বাড়াতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতাম, শিক্ষার্থীদের আহবান করতাম, অনেক চেস্টার পরে বেশ কিছু শিক্ষার্থী পেলাম তারা হলেন – ফয়েজ, সোহাগ, রুবেল, সুমন, হান্নান, মোস্তফা, মঞ্জু, আখের, লাকি, নাছরিন, উর্মি, রোমানা, সাথী, পুজা, অনামিকা আয়সা, শাহনাজ মুন্নি, মেহেদী জামান, অলক, ইকবাল, সাদেক, মিজান প্রমুখ।
ওদের নিয়ে আমার লেখা মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক ওরা বেঈমান নিয়ে চাঁদপুর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী নাটক মঞ্চায়ন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
এরপর থেকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি শুরু হয়ে গেলো এগিয়ে যাওয়া। সামাজিক আন্দোলন হিসাবে যৌতুক মুক্ত সমাজ, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে আশার আলো নাটক উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের স্কুল, গ্রামের উঠানে পথ নাটিকা করা হয়।
২০০৪ সালে জন সাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ইউনিসেফের অর্থায়নে শাহরাস্তি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের স্কুলে, মাঠে, হাটে বাজারে – আমার লেখা প্রত্যাশা নামক নাটিকা মঞ্চায়ন করি, সহযোগিতায় ছিলেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মিজানুর রহমান সহ কর্মকর্তারা।
গ্রামীণ প্রকল্প অার্সেনিক মুক্ত পানি পান করা – আর অার্সেনিক যুক্ত পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে নাটিকা মঞ্চায়ন করা হয়।
এরপর ব্রাকের জাতীয় পুস্টি কার্যক্রম এন এন পি
ন্যাশনাল নিউটেশন এর মাধ্যমে নোয়াখালী পল্লি উন্নয়ন একাডেমিতে নাটকের কর্মশালায় অংশ গ্রহন করা হয়।
গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রামীণ প্রকল্প রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং কার্যক্রমে যোগ দিতে কুমিল্লা পল্লি উন্নয়ন একাডেমি (বার্ডে) তে আমার নেতৃত্বে নাট্য কর্মশালায় অংশ নেয় শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠীর ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। সেখান থেকে ফিরে এসেই গর্ভকালিন মাদের সাস্থ্য ঝুঁকি থেকে বাচাতে এবং সচেতন করতে বেশ কিছু নাটিকা মঞ্চায়ন করা হয় শাহরাস্তি ও কচুয়া উপজেলায়।
২০০৬ সালে শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী আয়োজন করে সংগীত প্রতিযোগিতা তোমাকেই খুঁজছে শাহরাস্তি ওয়ান। যার লক্ষ ছিলো শাহরাস্তি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রামে গঞ্জে পড়ে থাকা সংগীত প্রেমিদের খুঁজে বের করা। সফলতার সাথে সেটিও করতে সক্ষম হয়।
যা কিছুই করিনা তার মুলেই হচ্ছে টাকা – আমার বাবার পকেটের টাকা, নিজের করা টিউশনির টাকা সব খরচ হয়ে যেতো সংগঠনের নাটকের রিহার্সাল সহ যাবতীয় কাজে, সহায়তা কারী তেমন কেউ ছিলো না।
সংগঠনের সবাই শিক্ষার্থী তাদের কাছে ১০ টাকা চাইলেও দিতে পারতো না। এক কথায় শুন্য হাতেই চলছি। সংগঠনের রিহার্সাল করার কোন জায়গা ছিলোনা ২০০৫ সালে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল ওয়াদুদ স্যারের কাছে সপ্তাহে একদিন নাটকের রিহার্সাল করার জন্য উপজেলা পরিষদ ব্যবহার করার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমোদন দেন।
এরপর সাপ্তাহিক নাটকের রিহার্সাল করার জন্য যে খরচা হতো তা ম্যানেজ করা খুব কস্ট ছিলো, বাদ্য হয়ে কিস্তি নিয়েই নাটকের কাজ করতাম।
সামাজিক আন্দোলন করার কারনে অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়েছে। নাটক করে জীবন চালানো অনেক কস্ট, শুধু মনের খোরাক হিসাবে তা করেছি সাথে সাংবাদিকতা। পরিবারের সবাই বকাবকি করতেন প্রতিনিয়ত। সরকারি অনুদান কি ভাবে পায় তাও জানিনা, এখন দেখি সবাই কোনমতে সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রীতিমতো বছর অনুদান নিচ্ছে।
শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী তাও পায়না নিজের তেলেই চলছে। সংগঠন এর গতি আনতে ২০০৮ সালে পাড়ি জমাই প্রবাসে, সেখানে বসেই আজও মাসিক অফিস ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি।
শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠীর দায়িত্বশীল যাহারা আছেন তারা হলেন – ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাংবাদিক আমরুজ্জামান সবুজ, সিনিয়র সহসভাপতি শওকত হোসেন রুবেল,সহসভাপতি শিল্পী আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এরশাদ আলম বেপারী, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম নয়ন, দপ্তর সম্পাদক রকি সাহা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জয় জিত সরকার, প্রচার সম্পাদক শিল্পী আরমান হোসেন, মহিলা সম্পাদক শিল্পী অন্তরা সরকার, নাট্য সম্পাদক আখের, মঞ্জুর হোসেন, স্বরনালী, হিয়া দে।
সন্মানিত সদস্য ফয়েজ আহমেদ, সাইফুল ইসলাম সিফাত, কামরুজ্জামান সেন্টু, নাজমুল হক জুয়েল, সাকিল মজুমদার, রৌসন অারা বেগম।
উপদেস্টা হিসাবে যাদের কাছে পাই – হাজী আবদুল লতিফ, আয়েত আলী ভুইয়া, প্রিন্সিপাল এম এ আউয়াল মজুমদার, সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম, ডাক্তার মফিজুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার সফিক মজুমদার, আবদুস সাত্তার পিপিএম বার, অ্যাডভোকেট শামছুল আলম, কাজী হুমায়ুন, মাসুদ রানা, মইনুল ইসলাম কাজল, স্বপন কর্মকার, বিপ্লব সাহা, ইমাম হোসেন পাটওয়ারী প্রমুখ।
আজ হাটি হাটি পা করে শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী ২৬ বছরে পা রেখেছে – সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দুর প্রবাসে বসে সকল বন্ধুদের অনেক মিস করছি। আজ আমি সত্যিই আনন্দিত।
আসুন সবাই সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে এগিয়ে যাই সুন্দর সমাজ ও দেশ গড়ার লক্ষ্যে।