আজিজুর রহমান মুন্না সিরাজগঞ্জঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ১৩নং জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ ও মহিলা ইউপি সদস্য মোছাঃ সালেহা বেগমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ১৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবুজাফর রিপন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের লোকাল গভর্ন্যান্স প্রজেক্টের (এলজিএসপি-৩) ২ অর্থবছরে মৌলিক থোক (বিবিজি) বরাদ্দকৃত ৩০ লাখ ১৫ হাজার ৮’শ ৪৪ টাকা জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক একাউন্ট থেকে চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে নিজের ব্যাক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে। বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ এবং ইউপি সদস্য সালেহা বেগমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ দুই অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগের এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে দুই কিস্তিতে মৌলিক থোক বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫ লাখ একান্ন হাজার ৮’শ ৮২ টাকা ও ১৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬২ টাকা। সর্বমোট ৩০ লাখ ১৫ হাজার ৮’শ ৪৪ টাকা ইউপি চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ, সাবেক ইউপি সচিব এস এম জিয়াউল করিম ও ইউপি সদস্য সালেহা বেগমের যৌথ স্বাক্ষরে গত ২০১৯ সালের ৭ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জালালপুর ইউপির ব্যাংক একাউন্টের ১’শ ২৯ টি চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে সোনালী ব্যাংক শাহজাদপুর শাখায় সাবেক সচিবের নিজ নামীয় সঞ্চয়ী হিসাবে (নং-৪২১৩৪৩৪১৩৩৯০১) স্থানান্তর করা হয়।

বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে এলজিএসপি-৩ এর ড্রিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর (ডিএফ) মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান ঘটনার তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় তিনি বাদী হয়ে জালালপুর ইউপির সাবেক সচিব এস এম জিয়াউল করিম ও অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে এনায়েতপুর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। বাদী মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান স্থানীয় সরকার বিভাগের এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালককে (যুগ্ম সচিব) মোবাইল ফোনে অবহিত করেন। সেইসাথে তদন্তকাজ শেষ করে ঘটনার সাথে জড়িত ইউপি সচিব ও অজ্ঞাতদের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে তছরূপকৃত সরকারি অর্থ উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এছাড়াও বাদী এজাহারের অনুলিপি স্থানীয় সরকার বিভাগের এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকে (যুগ্ম সচিব), সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রদান করেন।

এর প্রেক্ষিতে ১৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ এবং সদস্য মোছা. সালেহা বেগমকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, সাবেক ইউপি সচিব জিয়াউল করিম স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে এই টাকা গুলো সে নিজেই আত্মসাৎ করেছে। তারপরও আমি আমার ইউনিয়নের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে টাকা ব্যাবস্থা করে ব্যাংকে জমা দিয়েছি। বরখাস্তের বিষয়ে আমি উচ্চ আদালতে আপিল করেছি, আমার বিশ্বাস উচ্চ আদালত থেকে আমি ন্যায় বিচার পাবো।