বাইডেনকে ভোগাবে পররাষ্ট্রনীতিতে পম্পেওর যেসব সিদ্ধান্তে
মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত মাইক পম্পেও পররাষ্ট্রনীতিতে এমন কিছু মৌলিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলবে।
বাইডেন মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদেশনীতি গত চার বছরে বিশ্বে মার্কিন নেতৃত্ব ও প্রভাব ক্ষুণ্ণ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে তার মিত্রদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। শুরু থেকেই জো বাইডেন বারবার বলেছেন, বিশ্বে আমেরিকার ‘মর্যাদাপূর্ণ নেতৃত্ব’ প্রতিষ্ঠাই হবে তার বিদেশনীতির প্রধান লক্ষ্য।
এমন লোকজনকে তিনি তার পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন, যারা ‘একলা-চলো’ নীতির বদলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী। কিন্তু ক্ষমতার শেষ সময়ে চীন, ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত মাইক পম্পেও দিয়েছেন, যার পরিণতি জো বাইডেনকে ভোগ করতে হবে।
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন মাইক পম্পেও, যা নিয়ে জাতিসংঘ এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
চীনের স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে তাইওয়ানের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ রাখার যে নীতি যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে চীন।
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন, যা নিয়ে জাতিসংঘ এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘ ত্রাণ সংস্থার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিষদে বলা হয়েছে এই সিদ্ধান্তে ইয়েমেনে মানবিক দুর্যোগ ভয়াবহ রূপ নেবে।
যে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে জো বাইডেন বিশেষভাবে ইচ্ছুক, সেই কিউবাকে হঠাৎ করে সন্ত্রাসে মদদদাতা রাষ্ট্রের তালিকায় ঢোকানো হয়েছে।
ইরানে এখন আল কায়েদা তাদের প্রধান ঘাঁটি তৈরি করেছে এ অভিযোগ তুলে পম্পেও বেশ কিছু সিনিয়র ইরানি নেতা এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছেন। এমনকি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নিয়ন্ত্রিত কিছু প্রতিষ্ঠানকেও এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।
চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসার কোনো ইচ্ছা জো বাইডেনের না থাকলেও তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্কে সুর বদলাতে আগ্রহী।
ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তিতে ফেরা তার অন্যতম লক্ষ্য। ইয়েমেনের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ বন্ধে প্রয়োজনে সৌদি আরবের ওপর চাপ তৈরির জন্য ডেমোক্র্যাটদের বামপন্থী অংশের ভেতর থেকে বড় ধরনের চাপ রয়েছে তার ওপর। কিউবার সঙ্গে বৈরিতা দূর করার ব্যক্তিগত ইচ্ছা রয়েছে জো বাইডেনের।
কিন্তু বেছে বেছে মাইক পম্পেও শেষবেলায় ঠিক ওই জায়গাগুলোতে হাত দিয়েছেন। শুধু সিদ্ধান্ত নিয়েই ক্ষান্ত হননি পম্পেও, গত কদিন ধরে তিনি এমন সব বিবৃতি দিচ্ছেন যার প্রধান বক্তব্য- ডেমোক্র্যটরা আগেও তাদের বিদেশনীতিতে আমেরিকার স্বার্থ দেখেননি, এবারও দেখবেন না।
যেমন ওবামা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির পুরনো একটি ভিডিও তিনি টুইটারে পোস্ট করেছেন, যেখানে কেরি বলছেন– ফিলিস্তিন নিয়ে ছাড় না দিলে আরব দেশগুলো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে না।
ওই ভিডিও পোস্টের সঙ্গে পম্পেও লিখেছেন– এই মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞকে চিনে রাখুন! তিনি যেটি হবে না বলেছিলেন, আমরা তা করে দেখিয়ে দিয়েছি।