ঢাকা | ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪ - ১২:০২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

আধিপত্য বিস্তারে শমছুউদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Monday, April 3, 2023 - 1:14 pm
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 64 বার

মোঃ শহিদুল ইসলাম সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃর‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩) প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র‍্যাবের জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল ঢাকা মহানগরীর রমনা থানাধীন মৎস্য ভবন এলাকা থেকে সম্প্রতি সিলেটের জৈন্তাপুরে ভুমিস্বত্তা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জনৈক শমসু উদ্দিনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত মামলার প্রধান আসামি তাজ উদ্দীন (৪৪), নাসির উদ্দিন (৩৬)রহিম উদ্দিন (৪০), বশির উদ্দিন (৩৮), আহবাব হোসেন তানভীর (২৫)কে গত ২ মার্চ ২৩ ইং রাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

দুপুরে কাওরান বাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মোলনে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেঃকর্ণেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান আসামিদের মধ্যে অন্যতম তাজ উদ্দীন, নাসির, রহিম ও বশির এই ৪ জন আপন ভাই এবং ধৃত তানভীর তাদের ভাতিজা। ভিকটিম শমছু উদ্দিন তাদেরই আপন চাচাতো ভাই। তারা সকলে একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করত। পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে পূর্ব থেকেই বিরোধ চলে আসছিল। এছাড়াও দরবস্ত বাজারে দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দোকান ও বাজারের আধিপত্য নিয়ে দলাদলি ছিল। এরই জের ধরে গত দুই মাস পূর্বে ভিকটিম শমছু উদ্দিনের ভাই আমিনুদ্দিন এবং ধৃত আসামি তাজ উদ্দীনের মধ্যে বাজারের একটি গাছের ডাল কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। দরবস্ত বাজারের মসজিদের পাশে আমিন উদ্দিনের একটি দোকান রয়েছে।

আমিনুদ্দিন দোকানের সুবিধার্থে পার্শ্ববর্তী বটগাছটির কিছু ডালপালা ছেটে দিলে তাজ উদ্দীন তাকে বাধা দেয়। কিন্তু তাজ উদ্দীনের বাধা না মেনে গাছের ডাল কাটায় সে আমিনুদ্দিনসহ তার ভাই শমছু এবং উপস্থিত অন্যান্যদের উচিত শিক্ষা দিবে বলে হুমকি প্রদান করে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে টানা দুই মাস যাবৎ দুই পরিবারের মধ্যে কয়েক দফা হুমকি ধামকি এবং একাধিকবার বিচার সালিশ বসলেও বিরোধের সমাধান না হয়ে বরং উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এরই জের ধরে গত ২৪ মার্চ রাতে দরবস্ত বাজারের একটি চায়ের দোকানে ভিকটিম শমছুর ভাই শামীম এবং ধৃত আসামিদের বড় ভাই কামালের মধ্যে জায়গা জমি নিয়ে আবারো কথা কাটাকাটির সৃষ্টি হলে উভয়পক্ষ তাদের পরিবারের সদস্যদের খবর দিয়ে নিয়ে আসে এবং সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে একটি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করে এবং কিছু সময়ের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। এরপর গত ২৪ মার্চ ২০২৩ ইং দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৫ মার্চ ২০২৩ তারিখ রাত আনুমানিক ৩ ঘটিকার সময় তাজ উদ্দীন, কামাল উদ্দীন, নাসির, রহিম, বশির, তানভীর এবং আরিফ মিলে বাশ ও কাঠের লাঠি, কাঠের রুইল, লোহার রড ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমিনুদ্দিন, শমছুদ্দিন ও অন্যান্যদের উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য তাদের উপর হামলা করে এবং উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।

একপর্যায়ে ধৃত আসামি তাজ উদ্দীন তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে শমছু উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার ডান দিকে ও মাথার পিছনে কোপ মেরে গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে। সাথে সাথে ধৃত রহিম তার হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে পুনঃরায় শমছু উদ্দিনের মাথার মাঝখানে বারি মেরে জখম করে। এর ফলে শমছু উদ্দিন গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকে।

এদিকে ধৃত নাসির তার হাতে থাকা কাঠের রুইল দিয়ে ভিকটিমের ভাই শামীমকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার পিছনে বারি দিয়ে গুরুতর আহত করে। ধৃত বশির তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে ভিকটিমের ভাই ফয়সালের হাতে কোপ মেরে একটি আঙ্গুলে গুরুতর জখম করে। ধৃত তানভীর তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ভিকটিমের ভাই মাসুকের পিঠে বারি মারে। এভাবে এলোপাতাড়ি মারামারির পর তাজ উদ্দিন তার ভাইদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বাজারে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদেরকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের অবস্থা আশংকাজনক দেখে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ভিকটিম শমছু উদ্দিনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ২৮ মার্চ ২০২৩ ইং ঢাকার নিউরো সায়েন্স কলেজ ও হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসার পর ২৯ মার্চ ২০২৩ ইং পুনঃরায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠালে ৩১ মার্চ ২০২৩ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২.ঘটিকার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

এই সংক্রান্তে সিলেট জেলাধীন জৈন্তাপুর মডেল থানার গত ২৫ মার্চ একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। মামলা রুজু করার পর আসামীরা বাদীসহ ভিকটিমের পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে।

পরবর্তীতে চিকিংসাধীন অবস্থায় ভিকটিম শমছু উদ্দিন মারা গেলে বিজ্ঞ আদালত ৩০২ ধারা সংযোজনের আদেশ দেয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে উক্ত হত্যাকান্ডের মূলহোতা তাজ উদ্দিনসহ নাসির, রহিম, বশির এবং তানভীরকে র‍্যাব-৩ এর চৌকস টীম কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ফারজানা হক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) র‍্যাব-৩।