পার্লামেন্টে হামলার উসকানিতে ফেঁসে যেতে পারেন ট্রাম্প
মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় ফেঁসে যেতে পারেন দেশটির বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উসকানি ও হুকুমের আসামির খাতায় নাম উঠতে পারে তার। আর এমন হলে হোয়াইট হাউজ ছাড়ামাত্রই ‘লাল ঘরে’ ঢুকতে পারেন ট্রাম্প। তেমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন সরকারি আইনজীবীরা। বিচার বিভাগ বলছে, হামলার মদদদাতা হিসাবে ট্রাম্পের নাম উঠে এলে তাকেও বিচারের আওতায় আনবেন আদালত।
নিউইয়র্ক টাইমস ও নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনের এক শীর্ষস্থানীয় প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, বুধবারের ওই ঘটনায় চার্জ তথা অভিযোগ গঠনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ক্যাপিটল পুলিশ কেন দাঙ্গাকারীদের ঠেকাতে ব্যর্থ হলো সে প্রশ্নও করা হয়েছে চার্জশিটে। মার্কিন প্রেসিডেন্টই তার সমর্থকদেরকে উসকে দিয়েছেন কি না তা-ও তদন্ত করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
ওয়াশিংটন ডিসির ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি মিচেল শিওরিন এ তথ্য জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তাদের চার্জশিটে জড়িত সবার নামই রাখা হবে, তিনি যে-ই হোন না কেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম চার্জশিটে থাকবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা শুধু তাদেরকেই খুঁজছি না, যারা পার্লামেন্টের ভেতরে ঢুকেছিল।
নেপথ্য নায়কদের বেলায়ও বিচার বিভাগ সমান সচেতন। অন্য একটি সূত্র বলছে, চার্জশিটে নাম এলে হুকুমের আসামি হিসাবে গ্রেফতারও করা হতে পারে ট্রাম্পকে। আইনজীবীরা বলছেন, সংবিধান মোতাবেক আর ১২ দিন ক্ষমতায় আছেন ট্রাম্প। এই ১২ দিন তিনি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকলেও ১৩ দিনের মাথায় তাকে গ্রেফতার করতে আর কোনো বাধা থাকবে না পুলিশের, যদি তথ্য-প্রমাণে নিশ্চিত হয় তার উসকানি। পার্লামেন্টে হামলার ঘটনায় সব মিলিয়ে ১৫টি মামলা করা হয়েছে বলে জানান শিওরিন।
গ্রেফতারদের একজন সামরিক স্টাইলের সেমি অটোমেটিক রাইফেলসহ গ্রেফতার হন। তার সঙ্গে ১১টি মালাটোভ ককটেলও ছিল। এই ব্যক্তির পরিকল্পনা ছিল স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ ডেমোক্র্যাট সদস্যদের হত্যা বা আহত করা, যেন তারা বাইডেনকে জয়ী ঘোষণা না করতে পারেন। এনপিআর।
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বুধবার মার্কিন ক্যাপিটল হিলে ভাঙচুর চালানো দাঙ্গাকারীদের ছবি ও ভিডিও। এগুলো দেখে যাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে তাদের অব্যাহতি দিচ্ছেন চাকরিদাতারা।
সিএনএন ম্যারিল্যান্ডের মার্কেটিং কোম্পানি নাভিস্টার ঘোষণা দিয়েছে, কোম্পানির আইডি ব্যাজ পরে ক্যাপিটল ভবনে ভাঙচুর করার সময় ছবি দেখে এক কর্মীকে শনাক্ত করেছেন তারা। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি জানায়, ‘আমরা সব কর্মীর আইনি অধিকার ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের চর্চাকে সম্মান করি। কিন্তু প্রতিবাদ যখন জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠে তখন আমরা বিষয়টিকে বরদাশত করব না।’ টেক্সাসের আইনি ফার্ম গোসেহেড ইনসুরেন্স থেকে আইনজীবী পল ডেভিসকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমের ভিডিওতে দেখা গেছে, পল বলছেন, ‘আমরা ক্যাপিটলের দিকে যাচ্ছি, যা চলছে তা হতে দিতে পারি না।’ এদিকে ফেসবুক পোস্টে পল দাবি করেছেন, তিনি পুরোটা সময় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট ভিনসেন্ট কলেজের অধ্যাপক রিক সাকোনের বিরুদ্ধে ক্যাপিটলের দাঙ্গায় যোগ দেওয়ার সম্পৃক্ততার অভিযোগে তদন্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। তদন্ত চলাকালীন রিক পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছে, তার বিরুদ্ধে তদন্তের ফলাফল আমরা হাতে পেয়েছি। আমরা তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছি।’ রিক বলেন, ‘আমি এই স্কুলে ২১ বছর ধরে চাকরি করছি। আমি চাই না নাছোড়বান্দা গণমাধ্যম আমার প্রতিষ্ঠানের পেছনে পড়ুক। তাই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি।’ টেক্সাসের রিপাবলিকান পার্টি
রাজ্যের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস পদে থাকা ওয়াল্টার ওয়েস্টকে বরখাস্ত করেছে। ওয়েস্ট ক্যাপিটলের সহিংসতাকে সমর্থন করে ফেসবুকে বিবৃতি দিয়েছিলেন। টেক্সাসের রিপাবলিকান দলের ওয়েবসাইটে বলা হয়, টেক্সাস জিওপি সব সময়ই আইনশৃঙ্খলাকে সমর্থন করে।