ঢাকা | ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪ - ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা নানা হয়রানির শিকার

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Saturday, January 23, 2021 - 12:14 am
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 151 বার

মোঃ নাসির, নিউ জার্সি (আমেরিকা) প্রতিনিধিঃ করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই নিউইয়র্কে প্রথম বন্ধ ঘোষণা করা হয় রেস্টুরেন্ট, বার, পার্টি হল এবং বারবার শপ। লকডাউনের সময়ও রেস্টুরেন্ট, বার, পার্টি হল এবং বারবার শপ বন্ধ ছিল। প্রায় তিন মাস লকডাউনের পর নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো গত ৮ জুন লকডাউন তুলে নেন। লকডাউন তুলে নিলেও বিভিন্ন বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। আইন করে মাস্কের ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব এবং হ্যান্ডগ্লাভস পরা নিশ্চিত করা হয়। তারপরেও অনেকেই এ সব ব্যবহার করেন না। তারা আগের মতোই চলাফেরা করছেন। 

নিউইয়র্কে করোনার প্রকোপ কমার কারণে একসময় রেস্টুরেন্ট এবং বার চালুর নির্দেশ দেন নিউইয়র্কের গভর্নর কুমো এবং মেয়র বিল ডি ব্লাসিও। সেখানেও ছিল সীমাবদ্ধতা। অর্থাৎ ২৫% আসনের ক্রেতাদের বসার অনুমতি দেয়া হয়। নিউইয়র্কে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে আবারো তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রেস্টুরেন্ট খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হলেও কেবল টেকআউট নেয়া যাবে এবং বাইরে বসে খাওয়া যাবে। রেস্টুরেন্টের ভিতরে বসে কেউ খাবার খেতে পারবে না।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির রেস্টুরেন্ট এবং পার্টি হল ব্যবসায়ীরা করোনার প্রথম ধাক্কাতেই বেসামাল হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে ফেলেছেন। আবার অনেক ব্যবসার হাত বদল হয়েছে। অর্থাৎ মালিকানা বদল হয়েছে। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, অ্যাস্টোরিয়া, ব্রুকলিন, ওজনপার্ক এবং ব্রঙ্কসে বাংলাদেশি মালিকানাধীন বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং পার্টি হল। করোনার পর থেকেই এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা সংকটের মধ্যে পড়েন। বিশেষ করে করোনার পর থেকেই। প্রথম লকডাউনেই বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট এবং পার্টি হল মালিকরা সংকটে পড়েন। কারণ ঐ সময় এমন ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল যে, মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতেন না। অনেকেই আবার ১ থেকে ২ মাসের খাবার ক্রয় করে বাসায় বসে ছিলেন। আবার অনেক মানবাধিকার সংগঠনও কমিউনিটির কল্যাণে এগিয়ে আসেন। ঐ ধাক্কা সামলাতে অনেক ব্যবসায়ীকে বেগ পেতে হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলেও দুর্বল কাগজপত্রের কারণে অনেক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট মালিক তা গ্রহণ করতে পারেননি। আবার অনেকে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়েও সিটির আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। কেউ কেউ পিপির অর্থ কর্মচারিদের না দিয়ে নিজেরা গ্রহণ করেছেন বা অন্য কাজে লাগিয়েছেন। একই অবস্থা এসবি লোনের ক্ষেত্রেও। যারা অনিয়ম করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই আগামীতে সমস্যায় পড়তে পারেন।

করোনার প্রথম তাণ্ডবে অনেকেই তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গুটিয়ে ফেলেছেন, আবার কেউবা বিক্রি করে দিয়েছেন। বাংলাদেশি এলাকাগুলোতে দেখা যায়, সাইন বোর্ড পরির্তন বা নতুন সাইন বোর্ড। আর কষ্ট এবং সংগ্রাম করে যারা টিকে রয়েছেন দ্বিতীয় দফা রেস্টুরেন্টের ভেতরে বসে খাওয়ার সুযোগ বন্ধ করায় নতুন করে সংকটে পড়েছেন।

জ্যাকসন হাইটস এলাকার কয়েকজন বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট এবং পার্টি ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, রেস্টুরেন্টে বসে খাবার বন্ধ ঘোষণার পর তারা বেঁচে থাকার জন্য নতুন সংগ্রাম শুরু করেছেন। রেস্টুরেন্টের ভিতরে বসে খাওয়া বন্ধ। তাই তারা সিটির নির্দেশ অনুযায়ী রাস্তায় অস্থায়ীভাবে বসার জায়গা বানিয়েছেন। সেই জায়গাটি অনেকেই নিজেদের মতো করে বানিয়েছেন, কেউ সিটির নির্দেশ ফলো করেননি। সিটির নিয়ম অনুযায়ী ঐ বাসার স্থানটির দুটো সাইড উন্মুক্ত রাখতে হবে। অথবা দরজা লাগলে তা খোলা রাখতে হবে। অনেক ব্যবসায়ীই বলেছেন এই প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে কে উন্মুক্ত স্থানে খাবার খাবে? যে কারণে আমরা দরজা, জানালা এবং ভিতরে হিট লাগিয়েছি। তারা বলেন, এই করোনাকালে কেউ ভুলেও শরীরে ঠান্ডা লাগাতে চায় না। সুতরাং উন্মুক্তস্থানে বসে কেউ খেতে চায় না। গ্রীষ্মকাল হলে কথা ছিল। বাইরে বসে মানুষ এনজয় করে খেত। অনেকেই নিজেদের মতো করে বাইরে বসার স্থান বানিয়ে সমস্যায় রয়েছেন। তারা বলেন, এমনিতেই সমস্যা, তারপরেও ব্যবসার স্বার্থে, টিকে থাকা মানষে আর্থিক সংকটের মধ্যেও টানাটানি করে বাইরে বসার স্থান তৈরি করেছি। এই স্থানটি তৈরি করে এখন সিটির নতুন উপদ্রপে পড়েছি। প্রতিদিনই সিটির ইন্সপেক্টর আসছে এবং কাউকে সতর্ক করছে, কাউকে টিকেট দিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তারা অর্থ খরচ করে বাইরে বসার জয়গা বানিয়েও সিটির লোকজনের উৎপাতে তা ভেঙে দিয়েছেন। তারা বলেন, একদিকে নেই ব্যবস্যা, অন্যদিকে সিটির লোকজনের যন্ত্রণায় জীবন ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম। কেউ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের কষ্ট বুঝতে চায় না। তারা সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। তারা বলেন, সিটির উচিত এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের একটু সহযোগিতা করা। আর যাদের পার্টি হল রয়েছেন তারা আগেই ব্যবসা গুটিয়েছেন। তবে যাদের অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে তারা এখনো টিকে রয়েছেন।