ঢাকা | ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ - ৯:২৩ অপরাহ্ন

আমরা অনেকেই রাজনীতিবিদ নই,আমরা রাজনীতি জীবি

  • দৈনিক নবোদয় ডট কম
  • আপডেট: Thursday, January 14, 2021 - 2:17 am
  • News Editor
  • পঠিত হয়েছে: 79 বার

যেমন যাহারা মৎসজীবি তাহারা পুকুর,নদী নালা,খাল বিল থেকে মৎস্য আহরণ করে। যাহারা কৃষিজীবী তাহারা জমি থেকে কৃষি ফসল উৎপাদন করে। আর যাহারা রাজনীতিজীবি তাহারা রাজনীতি থেকে অপ-রাজনীতির মাধ্যমে অর্থ আহরণ করে থাকে। এই দেশের রাজনীতিতে রাজনীতিজীবির সংখ্যাই বেশি,দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ দিনে দিনে নিজের ইজ্জত সম্মান রক্ষায় গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে।

শুনেছি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে একদিন বলেছিলেন “আমাকে ছাড়া এই সংসদের সবাই কে কেনা যায়।

আরেকটি অপ্রিয় সত্য কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন সেটা হল “আমি যদি কাফনের কাপড় রিলিফ হিসেবে দেই নেতারা সেই কাপড় দিয়ে পাঞ্জাবি বানিয়ে ফেলবে”।

কথাগুলো নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলা হলেও সামগ্রিক ভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের-ই বহিঃপ্রকাশ।

যাহারা রাজনীতিবিদ তাহারা “নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ায়”অর্থাৎ মানুষের সেবায় বিনা লাভে নিজকে সর্বদা প্রস্তুত রাখেন, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যিনি রাজনীতি করেন তিনিই রাজনীতিবিদ।অন্যভাবেও বলা যায় নিজের পেটকে বড় না করে যিনি হ্নদয় দিয়ে দেশকে ভালোবাসেন তিনিই রাজনীতিবিদ।

আজ-কাল রাজনীতির নামে নেতারা অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। প্রায় ১৮কোটি জনগণের মধ্যে ১০/২০ হাজার মানুষ যাহারা লক্ষ কোটি টাকার মালিক। তাদের টাকা ১৮ কোটি মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়ে বলা হয় – মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বাস্তবতা হলো ধনীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে,আর গরীব দিন দিন নিঃস্ব হচ্ছে।

আজকে কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতাদের এতো এতো সম্পদ হয়েছে যে,তাদের টাকা দেশীয় সিন্ধুক ভরে উপচে পড়ার কারনে বিদেশে পাচার করতে বাধ্য হচ্ছে।

ফলে কানাডায় গড়ে উঠেছে বেগম পাড়া।
ভোট বিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত,জনপ্রতিনিধিরা আজ আমলাদের নিকট অসহায় এবং ধরাসায়ী। একজন জনপ্রতিনিধির কথা আজ আমলারা আমলে নিচ্ছে না।

অঘোষিত ভাবে আমলারা আজ প্রজাতন্ত্রের মালিক বনে আছে। যেখানে সংবিধানের ভাষ্য হচ্ছে আমলারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী।

ঘোষ দূর্নীতি এখন অনেকাংশে মানুষ অপরাধ বিবেচনায় নেননা। স্বাস্থ্যসেবা খাতের দূর্নীতি কেনাকাটার নামে অর্থ লোপাটের খবর দেশের প্রতিটি মানুষই জানে।

দ্রব্য মূল্য বেশিরভাগ মানুষেরই ক্রয় ক্ষমতার বাইরে, বাজার মনিটরিং নিষ্ক্রিয়,কোন কোন ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়। সাধারণ মানুষ কথা বলার জায়গা খোঁজে পাচ্ছে না। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভাব অভিযোগ জানানোর সুযোগ সংরক্ষিত,কোন কোন সময় অভিযোগের কথা জানাতে পারলেও সমাধানের আশ্বাস ছাড়া তেমন কিছুই হচ্ছে না,এটা আমি নিজেও ভুক্তভোগী একাধিক বার। ঐদিন শুনলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাইদ খোকন এবং বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং মামলা,অবশ্য এসব দেখে এখন আর অবাক হইনা।শুনলাম ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ের বক্তব্যও।

সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের মধ্য দিয়ে গনতন্ত্রকে ভূলন্ঠিত করে সৈরতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।ফলে রাজনৈতিক নেতাদের কদর কমে গিয়ে কালো টাকার মালিকদের রাজনীতিতে উত্থান ঘটেছে। যার কারনে,বর্তমানে ত্যাগ ও পরিশ্রমের পরিবর্তে তৈল মর্দন ও অর্থ-নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তির বড় হাতিয়ার হয়ে দাড়িয়েছে। কালো এবং হলুদ টাকার নিকট বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বলতার কারনে দেশ আজ চরম নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। আওয়ামী লীগের মতো দলে লক্ষীপুরের একজন মানব পাচারকারী পাপন এবং তার স্ত্রী বর্তমান সংসদের এম.পি। দুটো টিকিট একই পরিবারে একজন অরাজনৈতিক লোকের নিকট কত টাকায় বিক্রি হয়েছে সেটা আমার জানার বিষয় নয়,তবে লজ্জার বিষয় হচ্ছে সেই পাপন এখন কুয়েত কারাগারে বন্দী। যাহা বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম কোন সংসদ সদস্য পরবাসে গ্রেফতার হয়ে জেলখানায় আটক রয়েছে অথচ সংসদ সদস্য পদ বহাল। শুধু পাপন নয়, এরকম পাপনের মতো অনেক আদম বেপারী, ইয়াবা ব্যবসায়ী,সন্ত্রাসী, চোরাকারবারি,দূর্নীতিবাজ,ঘুষখোর অবসরপ্রাপ্ত আমলারা আজ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে।

অরাজনৈতিক এবং রাজনীতি জীবিদের হাতে আজ রাজনীতি বন্দী।দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে,ক্ষত-বিক্ষত গনতন্ত্রের চোরাগলিতে রাজনীতি তার আপন ঠিকানা খুঁজে বেড়াচ্ছে। দূর্নীতিমুক্ত দেশ,মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে খুব শীঘ্রই আবার রাজনৈতিক লোকদের হাতেই রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।

লেখক,সাংবাদিক মোঃ শফিকুল ইসলাম ভূইয়া।
সাধারণ সম্পাদক গাজীপুর জেলা প্রেসক্লাব।