অনুগল্প মফস্বল- রাজা বাদশাদের গল্প “শরীফ শামিল”
শরীফ শামিল
কোনো মেয়ে কে – কোনো দিনই সিগারেট ফুঁকতে দেখি নি , আমাদের এই মফস্বল শহরের কোন জায়গাতে। তবে শুনেছি।
ইঁচড়ে পাকা বলা হয়ে থাকে ছেলেদের । আর এসব মেয়েদের কে তাহলে ইঁচড়ে পাকি বলা সঙ্গত। অবশ্য বাংলা বাগধারার অনেক অর্থ ই আমার কাছে পরিষ্কার নয়।
আমার দোকানমালিক, আমাকে ভেজা বিড়াল বলে থাকেন।
আমাদের ভাঙা ফুটো বাড়িটাতে কয়েকটি বিড়াল থাকে। বেটি বিড়াল রা হাগা মুতা করে একটু আড়াল আবডালে কিন্তু বেটা বিড়ালরা মুতে লেজ উঁচিয়ে যত্রতত্র। বিড়ালগুলো কে আমি কোনো দিনই ভিজতে দেখিনি। তাই ভেজা বিড়াল এর অর্থ বুঝি না- সঠিক সঠিক।
শিশু কাল থেকে ই শুনছিযে, মা ও আমাকে ছেড়ে- আমার বাবা লাপাত্তা! কিন্তু কেন? এটা এক রহস্য আমার কাছে। আমার মতো ছেলে পুলের নাম রাজা বাদশা রাখা হয় কেন- সেও আরেক রহস্য।
আমার মা , এই ছোট্ট শহরের হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে, রান্না বান্না করে বেড়ায়। আমি ক্লাস এইট পাশ দিয়েছিলাম কিন্তু আর এগুতে পারিনি।
প্লাস্টিক এর বোতল কুড়িয়ে বেড়াতে হতো আমাকে । একসময় কেন যে আমাকে আর বোতল টোতল কুড়োতে ভালো লাগলো না। এখন আমি সুপার মার্কেটএ’ ‘ সু’ র দোকানে কর্মচারী হিসেবে- কর্ম করি। চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে পাই, কীভাবে তরুণদের মেধা ,কায়িক ও মানসিক শ্রমকে- কাজে লাগাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান…! অভিজ্ঞতা বোধহয় আমি একটু বেশি ই, সঞ্চয় করে ফেলছি– অভিজ্ঞতা কী মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ/ ঋদ্ধ করে?
আমাদের সুপার মার্কেট এ’র সামনে একটা কনফেকশনারি আছে। দুটো দোকান নিয়ে একটি ঘরকে বড় করা হয়েছে। ওখানে একটু নিরিবিলি তে, চা কফি ও সিগারেট ফুঁকি – আমার মতো একপাল তরুণ। এখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। আর সিগারেট কিনতে না কি মেয়েরাও আসে।এগারো মাস থেকে শুনছি- চোখে পড়ে নি আমার।
সেদিন কনফেকশনারি তে বসে দুজন তরুণ ফন্দি আঁটে- তাদের আরেক বন্ধুকে ফোনে গুরুত্বপূর্ণ খবর দিয়ে; তাদের নিজেদের ফোন বন্ধ করে দিয়ে- কীভাবে ওই বন্ধুকে শহরের অলিগলি ঘোরাফেরা করিয়ে ছাড়বে…!
ভিড়ভাট্টা বাড়ছে দোকানটাতে- সামনের রাস্তাটাতেও। পথচারী এক মোটকী যুবতীকে দেখে ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ভোটকা তরুণ জোরসে বলে ওঠে- ওগ্গে
মাগে..
কফির কাপে চুমুকটা দিতেই দেখি ,একটি মেয়ে কনফেকশনারীতে ঢুঁকে বেনসন সিগারেট কিনলো। আমি নড়েচড়ে বসি আর প্লাস্টিকের টুলটায় খামোখা একটা চাপড় মারি।
এ মেয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে বসবে না কি ? মেয়েটি আমাকে হতাশ করে দেয়; সিগারেট তার সাইড ব্যাগে ঢোকায়। সে আমাকে আরও হতাশ করে কারণ আমি মনে করেছিলাম যে, এসব মডার্ন মেয়েরা , পোশাকে আশাকে , চেহারা সুরতে কথা বার্তায় একটা আলাদা / বিশেষ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে থাকে। কিন্তু এই মেয়েটি সাধারণ এক মেয়ের মতোই।
তার পেছনে এসে দঁাড়ায় আরেক যুবতী- জিন্স কেডস পরা। যুবতী সাদা গোল্ড লিফ কেনে। আমি উত্তেজনায় উঠে দাঁড়াই। এই যুবতী হয়তো সিগারেট জ্বালাবে। সাবাস মফস্বল এলাকার সাহসী যুবতী সাবাস।
আমি কিছু একটা বলার জন্য উশখুশ করি– করতে থাকি…।